খুব গরম? বাইরে-ঘরে সর্বত্র! হাঁসফাঁস অবস্থা! পোশাকাদি তো পরের কথা এমন বেহালে শরীরের চামড়াও খুলে রাখতে পারলে একটু স্বস্তি পেতাম-বোধহয়! এই অসহ্য গরমে ছোট্ট রান্না ঘরে আগুনের পাশে দাঁড়িয়ে ঘামে ভিজতে ভিজতে যে মানুষটি রান্না করে খাওয়ায়-সেই মানুষটির কথা একবারও ভেবেছেন? তাঁর দরদ আলাদা করে বুঝেছেন কখনো? বাইরের গরম আর আগুনের গরমে নাস্তানাবুদ অবস্থায় রাঁধতে রাঁধতে তো তরকারির স্বাদ বিস্বাদ হয়নি!
এমন তীব্র গরমে চুলার পাশে যেতে পারবেন না বলে যে মানুষটি দু'বেলা রান্না কামাই দেয়নি সেই মানুষটি প্রত্যেক পরিবারের অবহেলিতদের একজন! ওয়াক্ত হওয়ার আগেই গরম ভাত, হরেক তরকারি সামনে হাজির করেন বলে সেই মানুষটির গুরুত্ব নিজের ভাবনা থেকে কখনোই উপলব্ধি করি না! অথচ তিনিও মানুষ! শখ-আহ্লাদ বহন করা অন্য সবার মতোই মন অথচ কতকিছু কতভাবে চেপে যান!
দ্বিগুন গরমে আগুনের পাশে দাঁড়িয়ে যে মানুষটি রান্না করে, সে মা হোক, বোন-কন্যা-স্ত্রী হোক কিংবা হেল্পিং হ্যান্ড হোক-তাদের প্রতি যেন কৃতজ্ঞতা রাখি! নারী রান্না করবে এটা কোন বিশ্বাসীর স্রষ্টা নির্ধারণ করে দেয়নি বরং সমাজ চাপিয়ে দিয়েছে এবং নারীরা মেনে নিয়েছে-তাই বলে কৃতজ্ঞতাবোধ থাকবে না, পুরুষ দরদ বুঝবে না-এটা অপৌরুষোচিত আচরণ হবে। এই উত্তাপে হরেক পদের আয়োজন চাপিয়ে দিয়েন না! অল্প খেয়ে ভালো থাকা যায়, বেশিদিন বাঁচা যায়!
যিনি রোজ রান্না করেন তাকে একলা করে রসুইঘরে পাঠিয়ে মোবাইল চাপা, টিভি দেখা কিংবা অনর্থক আড্ডা দেওয়া-এসব উচিত নয়। বরং পাশে দাঁড়ালে, একটু কাটাকাটি করলে, লবণ চেখে দেখলে, তাঁর সাথে গল্প করলে বরং সুসম্পর্কে রসায়ন বেশি জমে! ছুটির দিনে পুরুষ রান্না করুক! আগুনের তাপ সহ্য করলেই তবে ভুক্তভোগীর প্রতি দরদ আসবে। এই গরমে সবাই মিলেমিশে রান্না হোক! খাওয়ার শেষে যার প্লেটটি তার পরিস্কার করে রাখার রেওয়াজ হোক। আগুনের তাপ থেকে বাঁচতে অল্প আয়োজনে ক্ষুধার সমাপ্তি ঘটুক!
সবচেয়ে বড় কথা দাম্পত্য, সংসারে-সর্বত্র সহমর্মিতা থাকতে হয়। যে মানুষ মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা বুঝতে পারে সেই তো মানুষের আপন হয়ে ওঠে। একজন দাসীর মত খেটে মরবে আর বাকিরা লাটসাহেবের মত হুকুমজারি করবে-তবে তো আর মানবিকতা থাকে না। দাম্পত্যের রসায়নে, সংসারের সমীকরণে একজন যখন আরেকজনের প্রয়োজনের পরিপূরক হবে তখন প্রিয়জনের সংখ্যা বাড়ে।
মানুষ যতেœ যতেœ আপন হয়! অবহেলা-অভিযোগে জীবিতকালেও সম্পর্কের দাফন হয়। কাজেই তীব্র তাপের সাথে যারা আগুনের তাপও সহ্য করে তাদের প্রতি সম্মান যেন বাঁচে। নিরেট অমানুষ ছাড়া তরকারির লবণ কম/বেশি, স্বাদের ত্রুটি-বিচ্যূতি নিয়ে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে না! মানুষ মেশিন নয়! একটু এদিক-সেদিক হতেই পারে! শান্তির জন্য সহ্য, ভালোবাসার জন্য ধৈর্য-এসব থাকতে হয়। ভালোবেসেও বোঝানো যায়! রগচটা আচরণ করে, কাউকে আঘাত দিয়ে কে জিতেছে কবে? (রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক)