ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে খাসজমির ধান কাটাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে কামাল মিয়া (৫৫) নিহতের ৯ দিন পরও ক্ষোভের আগুনে পুঁড়ছে শাহজাদাপুর গ্রাম। ভুক্তভোগিরা ধান চাউল লুটপাট ও আগুন দিয়ে বসতঘর পুঁড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ করলেও পুলিশ বলছেন এই আগুন রহস্যজনক। ক্ষুদ্ধ হয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৪ নারীকে গ্রেপ্তার করেন। গত সোমবার রাত ১০টার দিকে শাহজাদাপুর গ্রামের নশু মিয়ার বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। গ্রেপ্তারকৃতদের স্বজনরা সাড়ে তের হাজার টাকা বকশিশ দিয়েও রক্ষা পায়নি। মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে জামিনে আসেন ওই চার মহিলা। পুলিশ, ভুক্তভোগি ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, কামাল মিয়া নিহতের পর থেকেই বিভিন্ন ভাবে অশান্ত শাহজাদাপুর গ্রাম। পুলিশি গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়িঘরে তালা দিয়ে পালিয়েছে অধিকাংশ পরিবার। সুযোগ নিচ্ছে একাধিক চক্র। বাদী পক্ষের লোকজনের পাশাপাশি তৃতীয় পক্ষের কিছু লোকও লুটপাটে মেতে ওঠেছে। বন্ধ হয়ে আছে ভরা মৌসুমে ইরি বোরো ধান কাটা। সোনালী ধান পেকে ঝড়ে পড়ছে জমিতেই। মালিকদের খবর নেই। কিছু লোক প্রকাশ্যে গোপনে ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে আসছে। গত সোমবার দিবাগত রাতে হঠাৎ আগুন আগুন করে চিৎকার করে ওঠে গ্রামের পশ্চিম পাড়ার নশু মিয়ার বাড়ির লোকজন। সরজমিনে দেখা যায় রাতের অন্ধকারের আগুনের লেলিহান শিখা উপরে ওঠছে। আগুনের কারণে চারিদিকে ফর্সা দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন বয়সের নারীরা আগুন বলে চিৎকার করছে। আর বালু আর পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। তাদের আর্তচিৎকারে চারিদিক থেকে কিছু লোক দৌঁড়ে আসেন। কিন্তু ততক্ষণে বসতঘর ও রান্না ঘর পুঁড়ে ছাঁই। শাহজাদাপুর ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা বিট অফিসার এস আই মো. জসিম উদ্দিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে শাহজাদাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত মো. মহসিন মিয়া ওরফে মন মিয়ার মেয়ে মমতাজ খানম (৩৬), পুত্রবধু আজিমুন্নেছা (৩৫), স্বজন মোছা. পপি আক্তার (২৭) ও ও মোছা. রমজান বেগমকে (৫০) কে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের একাধিক লোক বলছেন, এই আগুন বাদী লোকজন লাগিয়েছে। তারা শুধু আগুন নয়, দিনে রাতে ধান চাউল পুকুরের মাছ ও ধান লুট করছে দেদারছে। রাতের বেলা অনেকেই বড় বড় ছুঁড়া নিয়ে ঘুরে। আর পুলিশ বলছেন, এই আগুন রহস্যজনক। নিজেরা আগুন লাগিয়ে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছে। বেশ কিছু এই ঘটনার সাথে জড়িত। গ্রেপ্তারকৃত ৪ মহিলার কয়েকজন স্বজন বলেন, আগুনে বাড়িঘর পুঁড়ল। গ্রেপ্তারও হলো। সাড়ে তের হাজার টাকাও বকশিশ গুনতে হলো। আবার ৪ মহিলাকে আদালতেও যেতে হলো। আমাদের কি ভাগ্য! গ্রেপ্তারকৃত আজিমুন্নেছা গতকাল জামিনে এসে বলেন, আমরা আগুন নিভানোর কাজ করছি। এমন সময় পুলিশ আমাদের ৪ জন মহিলাকে ধলে ফেলে। পরে থানায় নিয়ে কথা বলবেন। সারারাত থানায় রাখলেন। আমাদের সাথে একটি কথাও বলেননি। সকালে আমাদেরকে আদালতে পাঠিয়ে দিলেন। এমন বিচার কোথাও দেখিনি। বাদী পক্ষের একাধিক লোক বলেন, আমাদের লোকজনও গ্রেপ্তারের ভয়ে গ্রাম ছাড়া। লুটপাট আগুনের সাথে আমাদের কেউ জড়িত নয়। হত্যাকান্ডের ৯দিন পরও একজন আসামীকেও গ্রেপ্তার করতে পারছেন না পুলিশ। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, এই আগুন রহস্যজনক। অবস্থা সৃষ্টি করার জন্য কিছু নারী পুরূষ নিজেরা আগুন দিচ্ছেন। আরো কাহিনি তৈরী করার চেষ্টাও করছেন তারা। সোমবার রাতের আগুনের সাথে জড়িত সন্দেহে ৪ মহিলাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছি।