বাগেরহাটের শরণখোলায় কৃষকদের সচেতনতা ও নিয়মতি পরার্মশ ও কৃষি র্কমর্কতাদের মাঠ তদারকির কারণে বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকদের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে। কৃষকদের পরিশ্রমের সোনার ফসল ঘরে তুলতে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) উপজেলার বলেশ্বর নদ তীরবর্তী জিলবুনিয়া মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে বোরো ধান কর্তন উৎসবের মধ্য দিয়ে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এ সময় প্রধান অতিথি বাগেরহাট -৪ আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ নিজ হাতে ধান কেটে কর্তণ উৎসবের উদ্বোধন করেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানে এমপি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, কৃষি বান্ধব সরকার কৃষকদের সাবলম্বী করতে ৫৭ টাকায় সার কিনে ২৮ টাকায় কৃষকদের মাঝে বিক্রি করছে। কৃষকরা নিজেদের প্রয়োজনে নয় মানুষের ও দেশের প্রয়োজনে রৌদ্রে পুড়ে কৃষি কাজ করে আমাদের আহারের ব্যবস্থা করছেন। এজন্য কৃষকদের আমরা মর্জাদা দিতে চাই। যারা কৃষি কাজে জড়িত থাকবে তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে। এ উপজেলাকে সমৃদ্ধ উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, বিএনপির আমলে সারের দাবিতে মিছিল করায় ১৮জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে কোনো দাবি নিয়ে কৃষককে রাজপথে নামতে হয়নি। আর কোনোদিন রাজপথে নামতেও হবে না। কারণ বর্তমান সরকার কৃষকদের সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা এবং মর্যাদা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে দেশ আজ খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। গবেষণার মাধ্যমে ধানসহ নতুন নতুন ফসলের জাত উদ্ভাবন হচ্ছে। লবণাক্ত অঞ্চলের জন্য লবণ সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন করায় উপকূলে সারা বছরই ধানচাষ হচ্ছে এখন।
উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি অধিদপ্তরের আয়োজনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম তারেক সুলতানের সভাপতিত্বে ফসল কর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার, আওয়ামীলীরে সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আজমল হোসেন মুক্তা। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য এম সাইফুল ইসলাম খোকন, প্রবীন আওয়ামীগ নেতা এম এ রশিদ আকন, শহীদ হোসেন বাবুল আকন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিলন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাছানুজ্জামান পারভেজ ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারবৃন্দ।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোস্তফা মশিউল আলম জানান চলতি রবি মৌসুমে উপজেলার চারটি ইউনিয়নে সাত সহ¯্রাধিক বিঘা জমিতে হাইব্রিড ধান এবং দুই সহ¯্রাধিক বিঘা জমিতে উপসি জাতের ধান চাষ হয়েছে। কৃষকদের উৎসাহিত করতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক প্রকল্প থেকে ৬৫ জন চাষীকে প্রর্দশণী দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ৩০০ জন চাষীকে প্রণোদনা হিসেবে উচ্চ ফলনশীল জাতের হাইব্রীড ধানের বীজ ৪০০ জন চাষীকে উপসি জাতের বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে ২৫০ জন চাষীকে বীজ দেয়া হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর দ্বিগুণ জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে।
উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের গাজীরব্রিজ এলাকার চাষী আলমগীর গাজী এই প্রতিনিধিকে জানায়, এ বছর সে ২০বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। কৃষি বিভাগ থেকে হাইব্রীড ধানের প্রর্দশণী পেয়েছেন। রায়েন্দা ইউনিয়নের উত্তর তাফালবাড়ি গ্রামের নিরব হালদার জানায় কৃষি অফিসের পরার্মশে তিনি এই প্রথম ৪ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। তিনি এক বিঘা জমি চাষের একটি প্রর্দশনী পেলেও পাশাপাশি আরো ৩ বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন। জিলবুনিয়া গ্রামের আঃ হামিদ, হারুন খাঁন, জামাল খান, দেলোয়ার হোসেন জানায়, তাদের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজার মূল্য ভালো রয়েছে। দু-একদিনের মধ্যেই পুরোদমে সবাই ধান কাটা শুরু করবেন। কয়েকজন চাষি অল্প জমির ধান কাটলে বিঘায় প্রায় ৬০ মন ধান পেয়েছেন।
উপজেলা কৃষি র্কমর্কতা দেবব্রত সরকার এ প্রতিনিধিকে জানান, কৃষকদের বোরো চাষাবাদে আগ্রহী করে তোলার জন্য নিয়মিত পরার্মশ দেয়া ও উদ্ভুদ্ধ করার কারণে গত বছররে তুলনায় দ্বিগুণের চেয়েও বেশি জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সহ¯্রাধিক চাষীকে কৃষি বিভাগের প্রণোদনা, বিভিন্ন প্রকল্পের প্রর্দশনী, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে বীজ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের নিয়মিত মাঠ তদারকির ও পোকা দমন প্রতিরোধে পরার্মশ প্রদানের কারণে বাম্পার ফলন হয়েছে। যে কারণে কৃষকদের চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ মতে চাষাবাদ করায় কৃষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। বাম্পার ফলনের কারণে আগামী বছর চাষাবাদের পরিমান আরও বাড়বে।