এক সপ্তাহেরও অধিক সময় ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে চলছে তীব্র তাপদাহ। চারিদিকে মানুষ ও জীবজন্তু হাঁসফাঁস করছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এখানকার জনজীবন। বৃষ্টির জন্য হাঁহাঁকার চলছে সর্বত্র। হিটষ্ট্রোকের আতঙ্কও বিরাজ করছে চারিদিকে। ইস্তিস্কারের নামাজের ব্যবস্থা করার আহবান করছেন লোকজন। প্রকৃতির এমন প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও থেকে নেই অনেকেই। তীব্র এই তাপদাহ উপেক্ষা করেই প্রতিদিন শ্রমবিক্রির অপেক্ষায় থাকেন সরাইলের নির্মাণ শ্রমিকসহ কয়েকটি সেক্টরের শ্রমিকরা। এদের মধ্যে রয়েছে শিশু ও কিশোর। কাঠপুঁড়া রোদ্র মাথায় নিয়ে ইরি বোরো ধান কাটতে মাঠে যাচ্ছেন আরেক শ্রেণির শ্রমিক। তারা বলছে, কাজ না করলে উপোস থাকতে হবে পরিবারের সদস্যদের। বেঁচে থাকার জন্যই তো কষ্ট স্বীকার করে কাজ করছি। সূত্র জানায়, গত এক সপ্তাহেরও অধিক সময় ধরে সরাইলের সর্বত্রই চলছে তীব্র তাপদাহ। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিটষ্ট্রোকে মানুষ মারা যাওয়ার খবরে আতঙ্কও বিরাজ করছে। সরকার জারি করেছেন রেড এলার্ড। বিনা প্রয়োজনে কেউ ঘর থেকে বাহিরে যাচ্ছেন না। অবর্ণনীয় কষ্টকর, যন্ত্রনাদায়ক ও দূর্বিসহ হয়ে ওঠেছে বাহিরের/ মাঠের কাজ কর্ম। তারপরও সরাইলে থেমে নেই কয়েক শ্রেণির শ্রমজীবী মানুষ। এদের মধ্যে নির্মাণ, ধান কাটা ও পরিবহন শ্রমিকরা উল্লেযোগ্য। তাদের কষ্টের বক্তব্য হচ্ছে, কাজ করলেই আমাদের পেটের ভাত জুটবে। নতুবা পরিবারসহ উপোষ। তাই হিটষ্ট্রোকের চিন্তা করতে পারি না। কারণ হিটষ্ট্রোকের মৃত্যু মেনে নিলেও উপোষ/অনাহারের মৃত্যু সহ্য করতে পারবো না। চোখের সামনে নিজের স্ত্রী সন্তানরা না খেয়ে থাকবে। এটা কি মানা যায়? তাই প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকেই সরাইল সদরের হাসপাতালের মোড় থেকে সকাল বাজার এলাকা পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় নির্মাণ শ্রমিকরা জড়ো হতে থাকে। এই তাপদাহের মধ্যেই তারা কাজে যেতে প্রস্তুত। সাড়ে ৮টার পর আসেন তাদের হেড মিস্ত্রী। ৯টার দিকে বিভিন্ন দলে বা গ্রƒপে বিভক্ত হয়ে শ্রমবিক্রি করতে চলে যান তারা। আর ধান কাটার শ্রমিকরাও ভোর বেলা জড়ো হন কুট্রাপাড়া মোড়ে ও আশপাশের এলাকায়। ফসলি জমির মালিকরা এসে তাদেরকে দরদাম করে নিয়ে যান। ভোর বেলা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাটি আর ইটা টানছেন ট্রাক্টরের শ্রমিকরা। তাদের সকলের পড়নের কাপড়ই ঘামে ভিজে গোসলের মত হয়ে যাচ্ছে। নাকে মুখে ও সারা শরীরে গড়িয়ে পড়ছে ঘাম। জ¦লে যাচ্ছে চেহারা। সুন্দর মুখ অবয়ব কালো হয়ে যাচ্ছে। সাথে নেয়া পানি শেষ হয়ে যায় নিমিষেই। মাঠের শ্রমিকরা একসময় পানির পিপাসায় ছটফট করতে থাকেন। তাপদাহের মধ্যে এভাবেই যাচ্ছে সরাইলের কয়েকটি সেক্টরের শ্রমিকদের দিনকাল। নিজেদের জীবনকে ঝুঁকিতে ঠেলেও তারা তাদের স্ত্রী সন্তানদের মুখে হাঁসি দেখতে চাই। সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো. নোমান মিয়া বলেন, হিটষ্ট্রোক এড়াতে সরকার রেড এলার্ড জারির পরও তাপদাহ উপেক্ষা করে শ্রমিকদের এভাবে কাজ করা প্রকৃত পক্ষেই ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের স্বাস্থ্যের জন্যও খুবই ক্ষতিকর। যেকোন সময় বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।