বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের ছোট ডুমুরিয়া গ্রামের এক দরিদ্র সুশীল দে নামে এক ব্যক্তি একই এলাকার কালাম হাওলাদার নামে এক সুদি মহাজন এর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা সুদে নেয়। এর পরে সুশীল এক বছরে সুদি মহাজনকে ৫০ হাজার টাকা নগদ পরিশোধ করেদেয়। ওই সুদি মহাজন এখন আরো ৩ লক্ষ টাকা দাবী করে ওইদরিদ্র পরিবারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছে। এ ঘটনায় সুশীল দের স্ত্রী সোমবার আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে সুষ্ঠ বিচারের দাবী জানিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
অভিযোগ ও সরেজমিনে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের ছোট ডুমুরিয়া গ্রামের মৃত শিরিশ দে’র ছেলে দরিদ্র দিনমজুর সুশীল দে একই এলাকার সুদি মহাজন কালাম হাওলাদারের কাছ থেকে ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর সাদা ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে ২০ হাজার টাকা সুদে আনেন। সুদের টাকা নিয়মিত পরিশোধ করতে না পারায় সুদি মহাজন কালাম হাওলাদার দিনমজুর সুশীল দে’কে হুমকি-ধামকি দেওয়ার কারণে সুশীল বাড়ি ছেড়ে পলিয়ে থাকে। দীর্ঘদিন তার সন্ধ্যান না পাওয়ায় সুশীলের স্ত্রী অঞ্জনা রানী দে বাদী হয়ে ২০২১ সালের ১ জুন আগৈলঝাড়া থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেন, যার নং-২৩।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য কাননী বেগম, মজিদ হাওলাদার, মোস্তাকিন হাওলাদার, হরিপদ দাস, জালাল ফকির জানায়, ২০ হাজার টাকা সুদে অনলেও বিভিন্ন সময় সুদ ও আসলসহ সুশীল দে ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে সুদি মহাজন কালাম হাওলাদারকে। এরপরেও কালাম আরো টাকার জন্য একাধিকবার চাপ প্রয়োগ করে। এ নিয়ে এক
শালিস-বৈঠকবসে তখন বলাহয় সুশীলের কাছে আর কোন টাকা দাবী করবে না বলে সিদ্বান্ত নেয়া হয়। এর পরে সুনিল দে বাড়ি ফিরেআসে। সুশীলের স্ত্রী অঞ্জনা রানী দে থানা থেকে সাধারণ ডায়েরী প্রত্যাহার করে নেয়।
অঞ্জনা রানী দে জানায়, আমি কালাম হাওলাদারের কাছে আমার স্বামীর স্বাক্ষরিত ষ্ট্যাম্প চাইতে গেলে কালাম হাওলাদার আমাকে কু-প্রস্তাব দেয়।
সুদি মহাজন কালাম হাওলাদারের কু-প্রস্তাবে আমি রাজি না হলে তিনি আমার স্বামীর নামে তিন লক্ষ টাকা দাবী করে ২৭ মার্চ বরিশাল আদালতে মামলা দায়ের করেন(যার সিআর নং-৩৯)। আদালত মামলার তদন্তভার দিয়েছেন আগৈরঝাড়া থানা ওসিকে। আমি এঘটনার সুষ্ঠ বিচার দাবী করে আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারিহা তানজিনের কাছে ২২ এপ্রিল লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।
এঘটনায় সরেজমিনের স্থানীয় ভালুকশী বাজারে গিয়ে গিয়াস উদ্দিন হাওলাদার, আলমগীর হাওলাদার, দেলোয়ার হোসেন, শাহাদাৎ কাজী ও সাবেক ইউপি সদস্য কাজী সালাউদ্দিন ঠান্ডু বললেন, প্রায় দুই বছর পূর্বে কালাম হাওলাদার ও সুশীলের মধ্যে সুদের টাকা লেন দেনের বিষয় সমাধাণ হয়ে গেছে। দরিদ্র পরিবারের বিরুদ্ধে এখন যে মামলা করেছে তা হয়রানির উদ্যোশে।
এব্যাপারে সুশীল দে বলেন, তিনবছর পূর্বে কালাম হাওলাদারের কাছ থেকে সাদা ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে বিশ হাজার টাকা এনেছিলাম। পরবতীর্তে সুদ আসল সব ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হলেও ষ্ট্যাম্পটি কালাম ফেরত না দিয়ে। ষ্ট্যাম্পে তিনলক্ষ টাকা লিখে আমার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে।
এব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শফিকুল সরদার সাংবাদিকদের বলেন, মামল তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন প্রেরন করা হবে।
অভিযুক্ত সুদি মহাজন কালাম হাওলাদার বলেন, অঞ্জনা রানী দে’র স্বামী সুশীল দে ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে আমার কাছ থেকে তিন লক্ষ টাকা নিয়েছে। দীর্ঘ দিনেও টাকা না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারিহা তানজিন সাংবাদিকদের বলেন, আমি লিখিত একটি অভিযোগ পেয়েছি। যেহেতু এঘটনাটি নিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুই পক্ষকে ডেকে সমাধানের চেষ্টা করবো।