চলতি বছর অনাবৃষ্টি ও টানা তাপপ্রবাহের কারণে ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় দেখা দিয়েছে কালীগঞ্জের লিচু চাষিদের। ভৌগোলিক অবস্থান,আবহাওয়াগত বৈশিষ্ট্য ও নির্দিষ্ট জাতের কারণে কালীগঞ্জের লিচু প্রতি বছর বাজারে প্রথম দিকে আসে বলে এর আলাদা খ্যাতি রয়েছে। এ বছর সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় লিচুর ফলনে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন লিচু চাষিরা। প্রচন্ড টানা তাপ প্রবাহে লিচুর গুটি যেমন ঝড়ে যাচ্ছে পাশাপাশি তা পরিপুষ্টও হচ্ছে না। এতে করে লিচু বাগান মালিক ও মৌসুমি লিচু ব্যবসায়ীরা লোকসানের শঙ্কায় করছেন। প্রতিটি লিচু বাগান মালিকরা বলছেন এ বছর তাদের লোকমান খেতে হবে। বিগত বছর গুলোতে বর্ষা হলে লিচু বড় হয় কিন্তু এবার লিচু বড় হচ্ছে না বরং গাছ থেকে প্রতিনিয়ত ঝরে পড়ছে। ফলে ক্ষেত মালিকরা তাদের লিচু বাগান নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ছে। ক্ষেত মালিকরা বলছেন অনাবৃষ্টির কারণে লিচু পুষ্ট না হওয়ায় এ বছর আশানুরূপ দাম পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন চাষিরা। কালীগঞ্জের লিচুর স্বাদ কিছুটা টক-মিষ্টি। তবে দেশি জাতের লিচু তুলনামূলক অনেক মিষ্ট হয় এবং চাহিদা ও বেশি থাকে।
উপজেলা কৃষি অফিস বলছেন, কারীগঞ্জে অনেকেই বানিজ্যিক হিসাবে লিচু বাগান করে কালীগঞ্জ পরিবার পরিজন নিয়ে বেছে থাকে। কিন্তু এবছর লিচু বাগানের যে াবস্থা তাতে করে বাগান মালিকরা তাদের গাছ বাগান দেখে হতাশ হয়ে পড়েছে। বাগানে লিচুর ে ফলন ধোরেছে তাতে করে তাদের নাকি খরছের দাম ও এবছর উঠবে না। কালীগঞ্জে অনেকের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লিচুবাগান আছে, অনেকে কৃষক তাদের বাগান দেখতে যেত বিগত বছরে। কিন্তু এবার তাদের গাছে যে লিচু ধোরেছে তাতে করে কেউ বাগানের খবর পেয়ে বাগান দেখতে যাচ্ছে না। প্রতিটি বাগান মালিক বলছেন অনাবৃষ্টির কারণে কালীগঞ্জ উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকার লিচু বাগানেই এ বছর গুটি ঝরে যাচ্ছে। এ ছাড়া লিচু আশানুরূপ পুষ্টও হচ্ছে না। অনেকে বিভিন্ন মেডিসিন ও পানি দিচ্ছে প্রতিনিয়ত তাতে ও কোন লাভ হচ্ছে বলে দাবি করে বাগান মালিকরা।কালীগঞ্জ উপজেলায় লিচুর মধ্যে রয়েছে মোজাফফর,এলাচি ও পাতি লিচুর। এ ছাড়া কদমি ও চায়না-৩ লিচু বর্তমানে ব্যাপক ভাবে চাষ করেছে অনেকেই। এসব লিচু পর্যায়ক্রমে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে লিচু আগাম বাজারে আসে, ক্রেতারা ও নুতর মৌসুমি ফল সখের মনেকরে ক্রয় করতে ঝুকে পড়ে।এ কারণে ভালো দাম পাওয়ায় এখানকার চাষি ও লিচু ব্যবসায়ীরা অনেকটাই লাভবান হন।
কালীগঞ্জ উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের ফরিদ উদ্দিন বলেন, তিনি প্রায় ২০ বছর মুকুল অবস্থায় অনেক সময় ব্যবসায়িদের কাছে বাগান বিক্রি করে দেন, আবার কোন কোন বছর ণিচ ুএকটু পুষ্টু হলে বাগান বিক্রি করেন। তিনি প্রতি বছর প্রায় ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা বিক্রি করেন। কিন্তু এবার ফরিদ উদ্দিনের বাগান লিচু কম ধরার কারণে দাম অর্ধেক হবে বলে মনে করছেন। ফলে এবার তার বাগানে লোকসানের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমনিতেই এ বছর লিচুর ফলন কম হয়েছে,তার ওপর খরতাপের কারণে গুটি ঝরে যাচ্ছে। এ ছাড়া তীব্র রোদ ও খরায় লিচু পুষ্ট হচ্ছে না। এভাবে খরতাপ চলতে থাকলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। কালীগঞ্জ উপজেলায় ফরিদ উদ্দিনের লিচু এলাকায় ব্যাপক চাহিদা থাকে প্রতি বছর।লিচুচাষিরা বলছেন আগামী ১৫/২০ দিনের মধ্যে দেশিয় লিচু কালীগঞ্জ বাজারে পাওয়া বলে আশা করছেন। তবে গুটি ঝরার কারণে এবার বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা তেমন মুনাফা করতে পারবেন না। এমন টা আশা করছে ও বাগান মালিকরা অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছে।প্রধান শিক্ষক নারাচন্দ্র বলেন,তিনি পরিবারের খাবারের জন্য কয়েকটা লিচু গাছ লাগিয়ে ছিলেন কিন্তু এবার গাছে মুকুল ও ফল তেমন টা ধরে নাই। সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন এ বছর লিচুর দাম অনেক টাই বেশি হবে, ফলে ক্রেতারা লিচু কিরতে গিয়ে হরহামেশার মধ্যে পড়বে। শহরের ব্যবসায়িরা বলছেন তারা এত টাকা দিয়ে লিচু কিনে বাজারে বিক্রি করলে ক্রেতার পরিমান অনেকটাই কম মিলবে।
কালীগঞ্জ উপজেলার মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, অধিক তাপমাত্রার কারণে লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে। এতে ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার লিচুচাষিরা অনেকটাই বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। তবে এ সমস্যা নিরসনে আমরা চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছি। লিচু গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে রিং করে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি দিতে হবে। এ ছাড়া ইউরিয়া ও বরিক অ্যাসিড পানিতে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করলে গুটি ঝরা রোধ করা সম্ভব হতে পারে।