খুলনার রূপসা উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ইমাম-মুয়াজ্জিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়টি সমাধানের দাবিতে মডেল মসজিদের মুসল্লীবৃন্দ গণস্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ রূপসা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর জমা দিয়েছেন।
কিন্তু অভিযোগের প্রায় ১ মাস অতিবাহিত হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না হওয়ায় সাধারণ মুসল্লিদের ভিতর ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, মডেল মসজিদের ইমাম মোঃ ফুয়াদ ফকির ও মুয়াজ্জিন ফাহাদ উদ্দিন আপন দুই ভাই হওয়ায় সকল কার্যক্রম ইচ্ছে খুশিমতো চালিয়ে যাচ্ছেন। মোয়াজ্জিন ফাহাদ উদ্দিন নিয়োগ প্রাপ্তিরপর নির্দিষ্ট তারিখে যোগদানের কথা থাকলেও আপন ভাই ইমাম হওয়ায় ৩/৪ মাস কর্মস্থলে যোগদান না করে অনুপস্থিত ছিলেন। তাছাড়া তাদের খামখেয়ালিপনার কারণে অধিকাংশ সময় মসজিদে আযান ও নামাজ সঠিক সময় না হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি কোন কোন সময় সাপ্তাহিক জুম্মার নামাজ শুরু করতেও দুইটা বেজে যায়। যার কারণে মুসল্লিদের অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়। অভিযোগ রয়েছে জুম্মার নামাজে ইমাম সাহেব যে আলোচনা করেন তা মুসল্লিদের বোধগম্য হয় না। অনেক সময় ওয়াক্তিয়া ফরজ নামাজে ভুল ও অশুদ্ধ কোরআন তেলাওয়াত করে থাকেন কিন্তু মুসল্লিরা লুকমা দিলে ইমাম-মোয়াজ্জিন দুই ভাই মিলে মুসল্লিদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তাছাড়া সরকারিভাবে কোন সিদ্ধান্ত আসলে গুরুত্ব সহকারে মুসল্লিদের সামনে সে বিষয়ে উপস্থাপন করা হয় না। অভিযোগে আরো জানা যায়, মাহে রমজান উপলক্ষে মুসল্লিদের মতামতের ভিত্তিতে খতমে তারাবির সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ইমাম সাহেব তারাবি নিজেই পড়াবেন বলে ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে তারাবি শুরু হলে অশুদ্ধ কোরআন তেলাওয়াত এবং দুই রাকাত পর পর মোবাইল ফোন দেখে নামাজ পড়ানো শুরু করেন। এ ছাড়া খতম তারাবিতে ধারাবাহিকতা ঠিক না রেখে ইচ্ছামতো এলোমেলো কোরআন তেলাওয়াত করতে থাকেন। যা মুসল্লিরা লোকমা দিলে নামাজ শেষে তাদের পরে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। বিগত ৯ রমজান ইমাম সাহেব তারাবি শুরুর আগে হঠাৎ করে ঘোষণা দেন আমার দ্বারা খতম তারাবি পড়ানো সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে মুসল্লিরা প্রতিবাদ করলে ইমাম ও মুয়াজ্জিন দুই ভাই মিলে মুসল্লিদের বলেন কোন আইনে বলা আছে যে খতম তারাবিই পড়তে হবে?
এসব কথা শুনে মুসল্লিরা মনঃক্ষুণ্ণ হন। পরবর্তীতে অন্য হাফেজ রেখে খতম তারাবি চলমান রাখা হয়। অপরদিকে মুয়াজ্জিন ফাহাদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা চলমান রয়েছে বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব কারণে সাধারণ (পুরুষ-মহিলা) মুসল্লিদের কষ্টের ভিতর নামাজ আদায় করতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি কোহিনুর জাহান জানান, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। রিপোর্টের ভিত্তিতে একটি মিটিং কল করা হবে। তারপর খুব দ্রুত সময়ের ভিতর সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বসে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রূপসা উপজেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ফিল্ড সুপারভাইজার এবং মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সদস্য সচীব কাজী এনামুল হক জানান, মুসল্লীবৃন্দের গণস্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ আমাদের দপ্তরে এসেছে। তারপর ইউএনও
সাহেবের সাথে কথা হয়েছিল। তিনি বিষয়টি নিয়ে বসার কথা বলেছিলেন। যেহেতু মডেল মসজিদের সভাপতি তিনি। পরবর্তীতে এ বিষয়ে আর কিছু জানাননি। তাছাড়া তদন্ত কমিটির বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নাই। আপনার কাছে শুনলাম মাত্র। এজন্য এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। বিষয়টি নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ জালাল আহমদ জানান, আমি অভিযোগের কপি পেয়েছি। বিষয়টি সিরিয়াস ভাবে দেখছি। আমাদের কার্যালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি পাঠানো হবে। তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অভিযোগের বিষয় নিয়ে মসজিদের মুসল্লী মোহাম্মদ আলী বকুল,মো: মোস্তাফিজুর রহমান ও কাজী শহিদুল ইসলাম জানান, দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এই উপজেলা মসজিদে নামাজ পড়ে আসছি। কিন্তু বর্তমানে মডেল মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জিনের কারণে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যা আগে কখনো দেখিনি। সবকিছু স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের মাধ্যমে চলছে। আমারা এর প্রতিকার চাই। বিভিন্ন অভিযোগের বিষয় মডেল মসজিদের ইমাম মোঃ ফুয়াদ ফকিরের নিকট তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন আমি কি বক্তব্য দিতে বাধ্য নাকি। এ বিষয়ে আমার বক্তব্য দেওয়ার কিছু নেই। কারণ আমি দোষী না। ইউএনও'র কাছে অভিযোগ করেছে তিনি বিষয়টি দেখবেন। আর অভিযোগের তদন্ত শেষে যদি আমি দোষি প্রমাণিত হই তাহলে যা শাস্তি দেবে মাথা পেতে নেব। পাশাপাশি স্থানীয় কিছু গণমাধ্যম কর্মীদের নাম উল্লেখ করে তাদের সাথে কথা বলার জন্য বলেন।