উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। দেশ এবং জাতিকে সমৃদ্ধিশীল করতে উচ্চ শিক্ষার বিকল্প নেই। সেই লক্ষ্য নারী শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। প্রশ্ন হলো ছাত্রীরা কী সুশিক্ষাই শিক্ষিত হচ্ছে? গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ৭৬ শতাংশ ছাত্রীই কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হন। যৌন হয়রানি হয়ে অনেকে আত্মহত্যাও করছে। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ব্লাস্ট আয়োজিত ‘যৌন হয়রানি নিরসনে উচ্চ আদালতের নিদের্শনা: বর্তমান অবস্থা ও বাস্তবায়নে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় একটি গবেষণার ফলাফল জানানো হয়েছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৭৬ শতাংশ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৬ শতাংশ এবং মেডিকেল কলেজে যৌন হয়রানির শিকার হন ৫৪ শতাংশ ছাত্রী। এ ছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ সহপাঠী ও শিক্ষকদের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, হয়রানি ও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের শিকার হচ্ছেন ৭৪ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অশালীন, ক্ষতিকর মন্তব্যের মাধ্যমে ৫৭ শতাংশ নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে সভায় জানানো হয়েছে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৫০ শতাংশের বেশি নারী অনলাইনে সহিংসতার শিকার হন। জরিপ অনুযায়ী, নিজ শ্রেণীর নয়, অন্য শ্রেণীর শিক্ষার্থীরাই ছাত্রীদের বেশি হয়রানি করেন। দুই-তৃতীয়াংশ ছাত্রী তাদের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হন। আর ছেলে সহপাঠীদের মাধ্যমে ২৫ শতাংশ এবং ক্যাম্পাসে আসা অন্য পুরুষদের মাধ্যমে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ ছাত্রী হয়রানির শিকার হন। এ ছাড়া নিজেদের বিভাগ ও অন্য বিভাগের পুরুষ শিক্ষকদের মাধ্যমেও ছাত্রীরা হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। ক্লাস চলাকালীন, ক্লাস না থাকার সময়, করিডোর, খেলার মাঠ প্রভৃতি স্থানে হয়রানির ঘটনা ঘটে। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়ন রোধে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু নির্যাতনের শিকার ছাত্রী বা নারী শিক্ষকেরা সেখানে অভিযোগ দিতে চান না। কারণ, অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রভাবশালী হলে বা ক্ষমতাসীন দলের হলে সেল বিচারে গড়িমসি করে। লোকলজ্জা, সামাজিক চাপও বড় বাধা। এভাবে যদি প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীরা যৌন হয়রানির শিকার হয় তাহলে সুশিক্ষাই শিক্ষিত হওয়া অসম্ভব। জাঁতি উন্নত হওয়ার বিপরীতে ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই দেশকে এই হিংস্র প্রাণীদের হাত থেকে রক্ষা করা অতিপ্রয়োজন। প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে। যারা যারা এসব অপরাধ মূলক কাজে লিপ্ত, তদন্ত কমিটি গঠন করে এদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যেন আগামীতে কেউ এমন জঘন্য কাজে লিপ্ত না হয়। সরকার যত দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিবে দেশ তত দ্রুত সমৃদ্ধিশীল হবে।