নওগাঁর মহাদেবপুরে অসামাজিক কাজের অভিযোগে এক সংখ্যালঘু পরিবারকে একঘরে করে রাখার খবর এফএনএস এ প্রকাশের পর অবশেষে সমাজপতিরা আনুষ্ঠানিকভাবে ভূল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করে একঘরে আদেশ তুলে নিয়েছেন। ভূক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সমাজে ফিরিয়ে নেন। এনিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিষয়টি একাধিক সংস্থা তদন্ত করছে।
গত ১৭ মার্চ ‘গৃহবধূকে মারপিট করে একঘরে করার অভিযোগ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রুহুল আমিন ঘটনাস্থলে একজন এসআই পাঠিয়ে বিষয়টি তদন্ত করেন। এ ছাড়া অভিযুক্তদের থানায় তলব করে অবিলম্বে একঘরে আদেশ তুলে নেয়ার নির্দেশ দেন। এরপর গত ১০ এপ্রিল বিকেলে হাতুড় ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হকের নেতৃত্বে তার অফিস কক্ষে ভূক্তভোগী পরিবার এবং গ্রামের মাতব্বরদের এক বৈঠকের আয়োজন করেন। বৈঠকে মাতব্বররা তাদের ভূল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং একঘরে আদেশ তুলে নিয়ে ভূক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সমাজে অবাধ বিচরণের ও সবরকম আচার অনুষ্ঠানে যোগদান করার অনুরোধ জানান।
ভূক্তভোগী পরিবারের গৃহস্বামী ভূগোল চন্দ্র বর্ম্মণ জানান, মাতব্বররা একঘরে আদেশ তুলে নিয়েছেন। এখন তার আর সমাজে চলতে কোন সমস্যা নাই। মাতব্বর প্রেমলাল চন্দ্র বর্ম্মণ জানান, তারা স্বল্পশিক্ষিত মানুষ। পুরোনো রেওয়াজ অনুযায়ী তারা ভূগোলের পরিবারকে একঘরে করেছিলেন। কিন্তু এটা আইনের পরিপন্থি হওয়ায় তিনি তাদের ভূল বুঝতে পেরে একঘরে দশা তুলে নিয়েছেন। মাতব্বর লক্ষ্মণ চন্দ্র বর্ম্মণও জানান একই কথা। মাতব্বর ও ইউপি সদস্য পরিমল চন্দ্র বর্ম্মন জানান, গ্রামের মাতব্বররা নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে একঘরে করেছিল। কিন্তু তিনি ইউপি সদস্য হওয়ায় সব দায় তার উপরে এসেছিল। প্রকৃতপক্ষে তিনি একঘরে করার ব্যাপারে কোনভাবেই জড়িত ছিলেন না। আলোচনা শেষে মাতব্বররা ভূক্তভোগী ভূগোল চন্দ্রের হাত ধরে ক্ষমা নিয়ে আপোশ রফা করেন।
ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক জানান, বিষয়টি ধর্মীয়ভাবে স্পর্শকাতর হওয়ায় তিনি নিজে উদ্যোগ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে শান্তিপূর্ণ মিমাংসা করে দেন। এতে গ্রামে শান্তি বজায় থাকবে।
একটি সূত্র জানায় এ বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদের কাটিং পাঠিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য নওগাঁ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নিকট পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসকের পক্ষে মহাদেবপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সুলতান হোসেন ও পুলিশ সুপারের পক্ষে মহাদেবপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়ব্রত পাল তদন্ত করছেন। ইতোমধ্যেই তারা সংশ্লিষ্টদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন বলে তারা উভয়েই জানিয়েছেন।