দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে মেঘনায় মাছ ধরার প্রথম দিনে আশানুরূপ ইলিশ না পেয়ে হতাশ চাঁদপুরের জেলেরা। তবে,যৎ সামান্য ইলিশের চেয়ে এই নদীর পোয়া চেওয়া,শিলং চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরা পরায় চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বড় স্টেশন মাছ-ঘাট এবং মেঘনা পাড়ের ছোট বড় আড়তগুলোতে সরাদিনই ওইসব মাছের চাকচিক্য দেখা গেছে।
আবারও আনন্দমুখর পরিবেশে নদীতে জাল ফেলছেন জেলেরা।মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি। ইলিশের আশায় মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বিকাল থেকেই নৌকা নিয়ে নদীতে নেমে পড়েন তারা।
ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে মার্চ ও এপ্রিল মাসে জুড়ে দেশের ছয়টি অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। দীর্ঘ বিরতির পর আবারও কর্মময় পরিবেশ ফিরে আসায় উচ্ছ্বসিত জেলে, আড়তদার, পাইকার ও মৎস্য চালানীরা। তবে প্রথম দিনে আশা অনুযায়ী মাছ না পাওয়ায় জেলেদেরে চোখেমুখে উৎকণ্ঠার ছাপ দেখা যায়।
সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর সাখুয়া খালের গুল্টিজালের জেলে বারেক খা বলেন, গত দুই মাস মাছ আহরণ থেকে বিরত ছিলাম। আজকে নদীতে নেমেছি। ইলিশ কম। কিছু চেওয়া মাছ পেয়েছি। ওই মাছ আড়তে বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছি।
একই এলাকার আরেক জেলে মো. সোলাইমান বলেন, তারা ৪ জন নদীতে নেমেছেন ইলিশ ধরার জন্য। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত যে পরিমান ইলিশ পেয়েছেন, তা সাইজে ছোট। তবে যেই মাছ পাইছি
বিক্রি করে জ¦ালানি খরচও উঠবে না।
এমন অবস্থা হলে নদীতে আপাতত যাওয়া হবে না।
হাজীগঞ্জ থেকে মাছঘাটে আসা ক্রেতা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, দুই মাস পরে আজ আড়তে মাছ আসা শুরু হয়েছে। তবে পরিমানে ইলিশ কম। দাম চড়া। যে কারণে ইলিশ কিনতে পারেনি। ইলিশের আমদানি বাড়লে তখন আবার আসবো।
চাঁদপুর মাছঘাটের একাধিক জেলে অভিযোগ করে বলেন, অভিযানের সময়ে কিছু অসাধু জেলে গোপনে জাটকা মাছসহ অন্যান্য মাছ ধরেছে। যে কারণে মাছের আমদানি কম। তারা সরকারি সুযোগ সুবিধা নিলেও মাছ আহরণ থেকে বিরত থাকেনি।
আড়তদার খোকন খা জানান, প্রথম দিনে ইলিশের আমদানি কম। যে কারণে দামও চড়া। আজ এক কেজি ওজনের বেশী ইলিশ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২শ’ টাকা, ৮শ’ থেকে ৯শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতিকেজি ১৬শ’ থেকে ১৭শ’ টাকা এবং ৫শ’ থেকে ৬শ’ গ্রামের ইলিশ প্রতিকেজি ইলিম বিক্রি হচ্ছে ১২শ’ থেকে ১৩শ’ টাকা।
ইলিশ চালানী খালেক বেপারি বলেন, আজকে ঘাটে ইলিশ আসছে কম। তবে অন্য প্রজাতির মাছ আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে পোয়া মাছ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৩শ’ থেকে ৩২০টাকা, চিংড়ি প্রতিকেজি ১হাজার থেকে শুরু করে ১ হাজার ৪শ’ টাকা। ছোট সাইজের চিংড়ি প্রতিকেজি ৬শ’ থেকে ৮শ’ টাকা। চেওয়া মাছ প্রতিকেজি ২৫০টাকা থেকে ৩শ’ টাকা। বড় সাইজের পাঙ্গাস প্রতিকেজি ১হাজার থেকে শুরু করে ১হাজার ১শ’ টাকা। আইড় মাছ প্রতিকেজি ৮শ’ থেকে ১হাজার টাকা। ছোট সাইজের বাটা ও বেলে মাছ প্রতিকেজি ২শ’ থেকে ২শ’ ৫০টাকায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতি লিমিটেড এর সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. শবেবরাত সরকার বলেন, দুই মাস বন্ধ থাকার পর আজ মাছ ধরা শুরু হয়েছে। তবে নদী এবং সাগরে এখন ইলিশ নেই। বর্তমান যে আবহাওয়া পরিস্থিতি তাতে ইলিশ পাওয়ার সম্ভাবনাও কম। যে কারণে আড়তগুলোতে মাছ সরবরাহ কম। আজকে কয়েকটি আড়তে আনুমানিক ১০ মণ ইলিশ এসেছে। তবে সামনে যে মৌসুম আসছে তখন হয়তবা ইলিশ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ছবি ক্যাপশনঃ চাঁদপুর মেঘনায় আবার মাছ ধরা শুরু হওয়ায় মৎস্য আড়তগুলো কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে।