জীবনে আরোগ্য লাভের জন্য যেমন ঔষধ প্রয়োজন, তেমনি জীবন সাজাতে প্রসাধনীর আবশ্যকতা অনস্বীকার্য। কিন্তু ভেজাল প্রসাধনী ব্যবহারের কারণে মানবদেহে সৃষ্টি হয় অনেক দুরারোগ্য ব্যাধির। বর্তমান বাজারে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ভেজাল প্রসাধনীর সংখ্যা। বাজারে নানা নামের দেশি-বিদেশি প্রসাধনীর ছড়াছড়ি। এই ভিড়ে ভেজাল বা নকল এবং মানহীন প্রসাধনীরও অভাব নেই। পাড়ার ছোট দোকান থেকে শুরু করে বড় বড় বিপণিবিতান-সবখানেই মিলেমিশে আছে আসল-নকল। এসব নকল প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে ক্রেতার আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি ত্বকেরও ক্ষতি হচ্ছে। ভেজাল প্রসাধনী শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর, যে কারণে বিভিন্ন দেশে নিয়ম আছে, খাদ্যের মতো প্রসাধনীরও মান নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ভেজাল খাবার ও ওষুধ যেমন ক্ষতি করে, তেমনি ভেজাল প্রসাধনীও ক্ষতিকর। এই প্রসাধনী গুলোর মধ্যে কিছু শরীরের ভেতর ঢুকছে না। আর কিছু ত্বকের উপরিভাগ থেকে ভেতরের দিকে ঢুকে পড়ে। এগুলো ভেজাল হলে ব্যবহারকারীরা ক্ষতির সম্মুখীন হবে। কতগুলো লিপস্টিক, ট্যালকম পাউডার, কিছু ক্রিম ও লোশন ত্বকের ভেতরে যায়। সেগুলো বেশি বিপজ্জনক। এসব যারা ব্যবহার করবে, তাদের হালকা ক্ষতি থেকে ধীরে ধীরে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। চূড়ান্ত ক্ষতি ত্বকের ক্যানসার হয়, ক্যানসারের জীবাণু তৈরি হয়। ত্বকে নতুন টিস্যু তৈরি হয় না। সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি প্রতিরোধ করতে পারে না। ফরসা ত্বক কালো হয়ে যায়। দেখা যায় দেশে প্রসাধনীর বিশাল বাজার এবং বিদেশি পণ্যের প্রতি মানুষের আকর্ষণকে পুঁজি করে অতি মুনাফার আশায় একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী জেনেশুনে মানুষকে এই বিপদে ফেলছেন। নকল প্রসাধনীর বিরুদ্ধে কঠোর আইন ও তৎপরতা না থাকার সুযোগ নিচ্ছেন তাঁরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঝে মাঝে অভিযান চালালেও নকল প্রসাধনী তৈরি কোন ভাবেই থামছে না। ঔষধ ও কসমেটিক্স আইন-২০২৩ এর ৩১-৩৫ ধারা অনুযায়ী কসমেটিক্স উৎপাদন, বিতরণ, আমদানি বা রপ্তানির জন্যে এবং এই কাজে নিয়োজিত কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা দোকান মালিককে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর-এর কাছে নিবন্ধন ও লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। লাইসেন্স ছাড়া বা লাইসেন্সের শতের বাইরে গিয়ে ঔষধ উৎপাদন, নিবন্ধন ছাড়া ঔষধ উৎপাদন, আমদানি রপ্তানি, মজুদ বা প্রদর্শন এবং সরকারি ঔষধ বিক্রি বা মজুদ বা প্রদর্শন করলেও ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু সরকারি হিসাবমতে দেশে অনুমোদিত আয়ুর্বেদ, ইউনানি ও হারবাল ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আছে ৪৫০টি। কিন্তু অননুমোদিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কয়েক হাজার। তাই সরকারকে জনস্বাস্থ্য রক্ষার লক্ষে এখনি কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ক্ষতিকর প্রসাধনী গুলো যাতে বাজারে যেতে না পারে, সে ব্যবস্থা সরকারকেই নিতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে ব্যাপক ভাবে প্রচার চালাতে হবে। প্রসাধনী আইনে সঠিক ও কঠোর ভাবে প্রয়োগ করতে হবে। সর্বোপরি ক্রেতাদের সচেতন হতে হবে। ক্রেতাদের ধোঁকা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন অসাধু ব্যবসায়ী আসল ব্র্যান্ডের মতোই প্যাকেজিং কিংবা মোড়ক তৈরি করে আসল পণ্যের দামে বিক্রি করেন নকলটি। এজন্য কসমেটিক্স কেনার আগে অবশ্যই সবার সচেতন ও সতর্ক হতে হবে। যে কোনো প্রসাধনী কেনার আগে প্যাকেজিংয়ের লেখা, পণ্যটি মেয়াদ আছে কি না কিংবা সেটি কোন কোন উপাদান ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে, প্যাকেজিং আসল কি না ইত্যাদি বিষয়ের উপর বিশেষ ভাবে লক্ষ রাখতে হবে।