চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নং লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে সরকারি বরাদ্দকৃত জাটকা রক্ষা কর্মসূচির জেলে চালের কার্ড বিতরণ নিয়ে বিরোধ ও অনিয়মকে কেন্দ্র করে ক্ষুব্দ জেলেরা আলোচিত সেই চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম খানকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এই ঘটনার জের ধরে চেয়ারম্যান গ্রুপ ও জেলে গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে চাঁদপুর সদর মডেল থানার মকবুল হোসেন নামে একজন এসআই রক্তাক্ত জখম ও ৫ পুলিশসহ ২০জন আহত হয়েছে। শুক্রবার (৩ মে) রাতে ইউনিয়ন কার্যালয়ের সামনে ও বহরিয়া বাজারে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে এ সংঘর্ষ বহরিয়া বেড়িবাঁধ সড়কের ওপর লক্ষ্মীপুর বালু খোলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে লিপ্তরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ইট পাটকেল কাঁচের বোতল নিয়ে একে অপর গ্রুপকে ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ওই এলাকা। এ সময় দুই দিকের যানবাহন চলাচল আটকা পড়ে। এ সময় ২৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। ঘন্টার পর ঘন্টা চলা এ সংঘর্ষ রাত ১১ টার পর পরিস্থিতির শান্ত হয়। ঘটনাস্থল অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আহতদের মধ্যে চাঁদপুর মডেল থানার এসআই মকবুল হোসেন (৫৫) ও কনস্টেবল আপেল মাহমুদ (৪০) কে ঢাকায় রেফার করা হয়। এ ছাড়া বাকিরা স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা নেন। প্রত্যক্ষদর্শী লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের ৭ নাম্বার ওয়ার্ড মেম্বার মো. হাবিবুর রহমান টিটু বলেন, ওই ইউনিয়নের সাড়ে ৪ হাজার কার্ডধারী জাটকা জেলেদের চাল বিতরণ চলছিল। এ সময় নিদিস্ট জেলের তুলনায় চাল কম হওয়ায় ৬ নাম্বার ও ৭ নাম্বার ওয়ার্ডের ৪০ থেকে ৫০ জন জেলেকে চাল দেয়া সম্ভব হয়নি। এজন্য বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের নির্দেশে এ পর্যায়ে চাল বিতরণ বন্ধ ঘোষণা করা হলে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম মনা খার বাড়ি এলাকার ওয়ার্ডের জেলেরা হামলা করে। এতে তাদের অন্তত ১০ থেকে ১২জন লোক আহত হন। এদিকে আরেকটি সূত্র জানায়, ওই চেয়ারম্যান কিছু জেলে কার্ড আটকে রাখায় জাটকা কর্মসূচির জেলে চাল থেকে বঞ্চিত করা হয়। এতেই ক্ষুব্ধ হন জেলেরা। এক পর্যায় ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান সেলিম খানকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে চেয়ারম্যানের লোকজন একত্র হলে ৭ নং ওয়ার্ডসহ চাল না পাওয়া ক্ষুব্দ জেলেদের সাথে রাতে শুরু হয় তুমুল সংঘর্ষ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। মধ্যরাত পর্যন্ত সেখানে চলে দেশীয় বিপুল অস্ত্রশস্ত্রের মহড়া। এত অস্ত্রশস্ত্র কোত্থেকে এলো তা নিয়েও প্রশ্ন সচেতন ইউনিয়নবাসীর। এ ব্যাপারে চাঁদপুর সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তানজিমুল ইসলাম বলেন, রাতে সেখানে চাল বিতরণের অনিয়ম নিয়ে বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যানের লোকজন মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। চাঁদপুর মডেল থানার ওসি শেখ মহসীন আলম বলেন, আমরা সেখানে হামলার ঘটনা শুনে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠাই। এ সময় আমাদেরকেও চারপাশ থেকে হামলা চালানো হয়। এ সময় বাধ্য হয়ে ফাকা গুলি বর্ষন করি। এ সময় দেশিও অস্ত্র, লাঠিসোট ও ইটপাটকেল নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়। এ সময় আমাদের একজন এসআইসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। তবে কেউ গ্রেপ্তার নেই। এদিকে, শনিবার সকালে এই সংঘর্ষের মুল কি কারণ ছিল, তা জানার জন্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চাঁদপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) সুদীপ্ত রায়। এ সময় জেলা থানা ও ফাঁড়ি পুলিশের বহর সঙ্গে ছিলো। উল্লিখিত ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন থানার ওসি।