কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটা তাজা করনে ব্যস্ত ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের খামারীরা পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে কালীগঞ্জে হাজার হাজার গরু মোটা তাজা করনে ব্যাস্ত সময় পাড় করছেন। কালীগঞ্জের কোরবানীর পশুর হাটগুলো জমতে শুরু করেনি। কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে বারবাজার,গান্না বাজারে কোরবানীর পশু এখন প্রস্তুত করা হয়নি।
সেই সাথে সাধারন ক্রেতাদের ও ভীড় করতে দেখা যাচ্ছে না। কোরবানীর ঈদের গরু ও ছাগল কেনা বেচা শুরু তেমন ভাবে হয়নি। আবার খামার গুলোতে চলছে পশু হৃষ্টপুষ্ট করনের কাজ। দেশি ও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করছেন তারা। বিগত বছর গুলো এ সময়ে অনেকেই গরু ও ছাগল কেনার জন্য হাটগুলোতে ভিড় করে থাকে। কিন্তু এবছর ক্রেতা নেই ও হাট গুলোতে গুরু মালিকরা এখন হাটে তুলছে না তাদের গরু। কোরবানির আর মাত্র কয়েকদিন পরে হবে। সে তুলনায় এবার গরু ও ছাগল বিক্রি তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। করোনার কারণে এবার কোরবানি কম হতে পারে ও হাটগুলোতে গরু ও ছাগলে আমদানি কম হতে পারে।
অনেক খামারি কোরবানি ঈদে গরু বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা লাভ করার আশা করছেন। মোটা তাজা করনের বিষয়ে খামারি বাদে ও গ্রাম এলাকায় অনেকে বাড়তি লাভের আশায় একের অধিক গরু ও ছাগল পালন করে থাকে। তারা বিভিন্ন মেডিসিন খাওয়ায়ে মোটা তাজা করছেন ক্রেতাদের কাছ থেকে ভাল দাম পাবার জন্য। একেকটি বড় খামারে ৫০ থেকে ১০০টি গরু এবং ছোট খামারে ৫ থেকে ২০টি গরু মোটা তাজা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এসব খামার থেকে গরু বিক্রি শুরু হয়নি। কালীগঞ্জের খামার গুলিতে স্থানীয় জাতের পাশাপাশি মোটাতাজা করা হচ্ছে নেপালি, হরিয়ানা, সিন্ধি, শাহীওয়াল জাতের গরু।মহিদুল ইসলাম জানায়, গত বছর ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায় এক একটি গরু কিনে চার থেকে ছয় মাস লালন পালন করে দুটি দেড় লাখ বিক্রি করেছিলেন। মোটাতাজা অরে অনেক ভাল দামে বিক্রি করতে পরেছিল।
এসব গরু মোটাতাজা করতে কোন ওষুধ বা ইঞ্জেকশন দেয়া হয় না। কালীগঞ্জের প্রানী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খামার গুলোতে নজরদারী রাখা হচ্ছে যাতে করে ক্যামিক্যালের মাধ্যমে কোরবানির পশু মোটা তাজা করা না হয়। খামারীদের দাবি দেশে পর্যাপ্ত পরিমানে কোরবানির পশু রয়েছে। কোরবানি উপলক্ষে ভারত বা অন্য কোন দেশ থেকে যদি পশু আমদানি করা হয় তাহলে হুমকির মুখে পড়বে দেশীয় খামারীরা। এবছরও সমপরিমান কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। চাহিদার অনুপাতে পর্যাপ্ত কোরবানির পশু মজুদ রয়েছে খামারিদের কাছে। কোরবানীর জন্য প্রস্তুত করা গবাদী পশু গুলোকে ঘাষ, খড়, খৈল, ভুষিসহ দেশীয় খাবারের মাধ্যমে হৃষ্টপুষ্ট করা হচ্ছে। অনেকে খামারি না হয়ে ও নিজ বাড়িতে ২/৪ টা গরু লালন পালন করে থাকে এবং বিভিন্ন মোটাতাজা করনের ট্যাবলেট খাওয়ায়ে থাকে। এসব ট্যাবলেট খাওয়ালে গরু ফুলে থাকে দেখলে মনে হয় অনেক মাংশ হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্রয়ের সময় যে টার্গেট নিয়ে কোরবানি দেওয়া হয় সে পরিমান মাংশ হয় না। অবশ্য এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা দরকার। অনেকে বেশি দাম পাওয়ার আশায় স্থানীয় ভাবে দলগত ভাবে ট্রাকে করে গরু নিয়ে ঢাকার গাবতলি বা চ্রটগ্রাম নিয়ে বিক্রি করে থাকে। আবার বাইরে থেকে অনেক ব্যাপারি কালীগঞ্জ,বারবাজার ও গান্না বাজার থেকে তাদের পছন্দমত গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এরা গরু কিনে নিয়ে ঢাকা বা চট্রগ্রাম এলাকায় মজুত করে রেখে বেশি দামে বিক্রি করবে এমন তার্গেট তাদের রয়েছে। বিগত বছরের মত এবা ব্যাপারিরা গরু কিনতে এখন ও হাটে আসেনি।
খামারীরা জানান, কোরবানীর ঈদ যতই ঘনিয়ে আসবে ততই কালীগঞ্জ এলাকার পশুর হাট গুলোতে গরু কেনাবেচা জমে উঠতে শুরু করবে। তাই গরু মোটাতাজা করতে খামারীদের ব্যস্ত সময় পাড় করতে হচ্ছে। খামারীরা তাদের গরু বিক্রি করতে শুরু করেছে। আবার কেউ কোরবানি ঈদ সামনে করে বিক্রি করবে বেশি দামের আশায়। কালীগঞ্জের মল্লিকপুর গ্রামের তানভির হাছান ও শ্রীরামপুর গ্রামের ফরিদ উদ্দিন গরু ম্ােটা তাজা করনের ফার্ম করে অনেক টা স্বাভলম্বি হয়েছে। এরা দেশিয় ছোট গরু কিনে বিভিন্ন পদ্ধতিতে মোটাতাজা করে থাকে। ক্রেতারা বলছে এ বছর গরুর দাম এখনই অনেক বেশি। সামনে আর ও বেশি হবে এমন আশঙ্কা করছে। অন্যদিকে গরু মোটা তাজাকরণের নিষিদ্ধ ওষুধ প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ওষুধের ফার্মেসি থেকে শুরু করে হাট-বাজারে। সহজলভ্য হওয়ার সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন অসাধুরা।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওষুধ খাওয়ানোর গরুর মাংস খেলে মানুষের শরীরে নানা ধরনের রোগ ঢুকে। এতে কিডনির সমস্যাসহ নানান জটিল রোগে আক্রান্তের সম্ভাবনা রয়েছে।এ ধরনের ওষুধ খেয়ে গরু গুলো রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে মোটাতাজার বিপরীতে অনেক গরুর মৃত্যু হচ্ছে। এতে লাভের তুলনায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন অনেক খামারি। অনেকে বাংলাদেশি ভিটামিন খাওয়ায়ে মোটাতাজা করছে। আবার কেউ ভারতীয় ওষুধ দিয়ে মোটাতাজা করছে। এদিকে কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার এলাকায় মাঝদিয়া গ্রামের ঘোষপাড়ায় অনেকেই ৮ থেকে ১০ টি গরু মোটাতাজা করন করে থাকে দীর্ঘদিন থেকে। তারা এবার কোরবানি ঈদে বিক্রি করবে এমন আশা রয়েছে।
কিছু খামারির ধারণা পশু মোটাতাজা করতে সহায়ক হয়। তবে তারা এটির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া জানেন না। আবার অনেক খামারি জেনেই এ পন্থা অবলম্বন করছেন। যাতে পশু মোটাতাজা হলে কিছু বাড়তি টাকা পান।কয়েকদিন দিন পরেই পবিত্র ঈদুল আযহা’র। এ ঈদকে সামনে রেখে কোরবানির বাজরকে টার্গেট করে একটি অসাধু ব্যাসায়ি চক্র বেশী দামে বিক্রির আশায় গরু মোটা তাজা করণ বাণিজ্যে ব্যাস্ত রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।স্থানীয় প্রানী সম্পদ অধিদপ্তর বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঠিক নজরদারী না থাকায় এসব অসাধু ব্যাবসায়িরা অনায়াসে পার পেয়ে যাচ্ছে। আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়ে যাচ্ছে এসব ব্যবসা। প্রকুত গরু ব্যবসায়িরা বলছেন এবার কোরবানির বাজারে গরুর সংকট দেখা দিতে পারে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু মৌসুমী ব্যবসায়ি গরু মোটামাটাতাজা করছে।
বিশিষ করে শহরের চাইতে গ্রামগঞ্জে এই ব্যবসা জমজমাট। গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে এখন গরু মোটাতাজা করণে ব্যাস্ত এ সকল ব্যাবসায়িরা। এ সকল ব্যবসার সাথে গ্রাম্য ডাক্তাদের কাজে লাগাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়িরা। তাদের মাধ্যমেই প্রানঘাতি ইনজেকশন গুলো ত্রয় করে গরুর শরীরে প্রয়োগ করা হয়। এতে তারাও হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা।এসকল ব্যবসা বন্ধ করার যেন কেউ নেই। সচেতন মহলের দাবী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি এখনি সু-দৃষ্টি দেয় তাহলে কিছুটা হলেও তাদেরকে রোধ করা সম্ভব।
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় সামর্থ্যবান মুসলমানেরা ঈদণ্ডউল-আজহায় পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। ঈদে দেশীয় গরুর ব্যাপক চাহিদা থাকায় কালীগঞ্জে প্রান্তিক কৃষক ও ছোট খামারিরা গরু পালন করছেন। কিছুটা বাড়তি লাভের আশায় ঈদকে সামনে রেখে সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত গরুকে গোসল করানো খাবার দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রান্তিক খামারিরা। তবে ভালো দিক হলো ক্ষতিকর ইনজেকশন ও ট্যাবলেট ব্যবহার না করে দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করছেন খামারি ও কৃষক।এক ব্যাক্তি বলেন, তিনি তিনটি গরু ক্রয় করেছিল ৪ মাস আগে মোটাতাজা করার জন্য।
এক একটা গরু প্রায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা করে কেনা। ঈদের আগে শেষ মুহূর্তে গরু মোটাতাজা করতেছি। ইন্ডিয়ান গরু না আসে তাহলে আমরা একটু লাভবান হতে পারব। সরকারের কাছে আবেদন ঈদের আগে যাতে ইন্ডিয়ান গরু বাংলাদেশে না ঢুকে তাহলে ছোটখাটো খামারিরা লাভবান হতে পারবো।কালীগঞ্জ উপজেলার বেশির ভাগ খামারি দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করছেন। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে ঘাস-খড়ের পাশাপাশি খৈলগুঁড়া ও ভুসি খাওয়ানো হচ্ছে। গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে গরুতে লাভ কিছুটা কমে গেছে।