সরকারি খাস খালের পাড় খাস জমি হিসেবে বন্দোবস্তো নিয়ে এলাকাবাসীর চলাচল করার রাস্তার উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে দিয়েছে প্রভাবশালী ব্যক্তি সরদার সেলিম হোসেন। খাস জমি হিসেবে বন্দোবস্ত নেয়া কথিত ভূমিহীন ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া গ্রামের মোঃ ওয়াছেক আলী সরদার। উপজেলার ছোট কৈয়ে জলমহাল নামে ওই খালের বুকে ঘর তৈরি করে তাদের কাছ থেকেও হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। ওই রাস্তাটি স্থানীয় সরকার বিভাগের তালিকাভূক্ত শেখ রাসেল সড়ক নামে চিহ্নিত যার আইডি নম্বর ২৪৭৩০৪১২০। কথিত ভূমিহীন মো: ওযাছেক আলী সরদার বিগত চারদলীয় সরকার আমলে ২০০২ সালে প্রভাব কাটিয়ে খালের পাড় খাসজমি হিসেবে বরাদ্দ পেয়েছেন।
জানা যায়, ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়নের বাদুরগাছা মৌজার জেএল নম্বর ৬১ এর ছোট কৈয়ে খালের পাড়। যা স্থানীয় এক ভূমি মাপকারি আমিনের স্কেচ ম্যাপের বদৌলতে খাসজমি হিসেবে চিহ্নিত করে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ভূমিহীন সেজে বন্দোবস্তো নেন গুটুদিয়া গ্রামের মোঃ ওয়াছেক আলী সরদার। বন্দোবস্ত নিয়ে সে সময়ে ক্ষমতার দাপটে জলাশয় দখল করে। তাছাড়া খালের দক্ষিণ প্রান্তে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাধ ঘেষে স্থাপনা তৈরি করে ভাড়া দেয়। স্থাণীয় এলাকাবাসীদেরকে খালের পাশ দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দেয়। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তর বন্দোবস্ত দেয়া ও দলিল বাতিল ঘোষনা করে একটি রায় দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে ৫৫৩৩/২০১৫ সালে একটি রীট পিটিশন দাখিল করে। সে বনিয়াদে বন্দোবস্ত পাওয়া ব্যক্তির ছেলে সরদার সেলিম হোসেন বিধি বহির্ভূতভাবে একটি লাল সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়। ভূমিহীন হিসেবে জমি বরাদ্দ পাওয়া গুটুদিয়া গ্রামের মৃত নেছার উদ্দীনের ছেলে ওযাছেক আরী সরদার ভূমিহীন নন। তিনি গুটুদিয়া মৌজার ডিপি ৩৭৩ খতিয়ানে তার জমি রয়েছে। তার ছেলে সরদার সেলিম হোসেন কয়েক কোটি টাকার জমির মালিক।
বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্থানীয় জনসাধারণ চলাচলের জন্য রাস্তটি খুলে দিয়ে সংস্কার করার জন্য তৎকালিন সংসদ সদস্য ও বর্তমানে ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দণ্ডএর নিকট কাছে দাবি জানান এলাকাবসী। পরবর্তিতে নির্বাচনের পরে ওই স্থানে রাস্তা সংস্কার করতে গেলে দেশীয় অস্ত্র- শস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে সেলিম হোসেন কাজ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তিতে বেআইনীভাবে বন্দোবস্ত পাওয়া ব্যক্তি হাইকোর্টে স্মরণাপন্ন হন। বিজ্ঞ আদালত মামলার নির্দেশনায় গত ৩১ মার্চ ২০২৪ তারিখে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের ৪ সপ্তাহের জন্য জবাব দেয়া ও ৬ মাসের জন্য স্থিতিবস্তা বজায় রাখার আদেশ দেন।
এদিকে শেখ রাসেল সড়কটি সংস্কার করতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের আওতায় ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন। ওই ওয়ার্ডের সদস্য কাজটি বাস্তবায়ন করতে গেলে সেলিম হোসেন পাইলিং ভেঙ্গে ফেলে। এ নিযে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দেয়। একাধিক নারী পুরুষ অভিযোগ করে বলেন, আমাদের বসবাসের জন্য কোন জমি নেই। তাই খালের উপর ঝুলন্ত ঘর তৈরি করে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছি। কিন্তু সেলিম সরদার আমাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিযেছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের প্রকৌশলী রাসেল আহম্মেদ জানান, বাদুরগাছায় একটি রাস্তা তৈরি করতে গেলে বাধাপ্রাপ্ত হই। পরবর্তিতে জমি মাপজোপ করে রাস্তায় কাজ করা হবে বলে জানান তিনি।
শেখ রাসেল সড়কে সাইন বোর্ড স্থাপনকারি সরদার সেলিম হোসেন দাবি করেন, এ জমি তার পিতার রেকর্ডীয় সম্পত্তি। এ জমিতে কোন অবস্থাতেই রাস্তা তৈরি করতে দেয়া হবে না। সেলিম হোসেন ঘর বাবদ কারও কাছ থেকে টাকা নেননি বলে জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবদুর রহমান তাজকিয়া বলেন, কৈয়া এলাকায় অনেকেই অবৈধভাবে সরকারি জমি দখল করে ইমারত নির্মাণ করেছে এমন অভিযোগ রয়েছে। অচিরেই তাদেরকে স্থাপনা সরিয়ে নিতে নোটিশ দেয়া হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্থাপনা সরিয়ে না নিলে তাদের বিরুদ্ধে অননগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন বলেন, খালের উপর কোন ব্যক্তির আইনগত বৈধতা নেই। যদি কেউ তথ্য গোপন করে ভূমিহীন সেজে খাল ভরাটি জমি বন্দোবস্তো নিয়ে থাকেন তাহলে ওই বন্দোবস্তো বাতিল করা হবে।