চট্টগ্রামের হাটহাজারী তথা দেশে মাশরুম চাষ সম্প্রসারনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র্যহ্রাস করন প্রকল্পের আওতায় কৃষক মাঠ দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, প্রধান মন্ত্রীর ঘোষণা বেকারত্ব দূরীকরণের মাধ্যমে দেশে পুষ্টির চাহিদা পুরন করে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে মাশরুম চাষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। দেশে বেকারত্ব কমাতে সম্ভাবনাময় ফসল হিসেবে দেখা হচ্ছে ‘মাশরুমকে’। ঘরের খালি জায়গা, ছায়াযুক্ত পরিত্যক্ত জায়গাকে সামান্য খরচে মাশরুম চাষের উপযোগী করে নেয়া সম্ভব। যা পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি উদ্বৃত্ত অংশটুকু বিক্রয়ের মাধ্যমে আর্থিকভাবে সাবলম্বি হওয়া সম্ভব। মাশরুমে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় ৯টি এমাইনো এসিডের মধ্যে সবগুলোই বিদ্যমান। মাশরুমে প্রোটিনে ভরপুর। এতে কোন প্রকার ক্ষতিকর চর্বি না থাকায় নিয়মিত মাশরুম খেলে মেদভূড়ি, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ইত্যাদি জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়'।
রোববার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রামের উদ্যোগে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের মাহমুদাবাদ এলাকায় আয়োজিত কৃষক মাঠ দিবস উপলক্ষে মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্য হ্রাসকরণ প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত মাঠদিবসে বক্তারা এসব তথ্য তুলে ধরেন। মাঠদিবস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইং এর পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোহাং নাছির উদ্দীন ও ইফনাপ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ ড. মোঃ আকরাম হোসেন চৌধুরী, জেলা প্রশিক্ষন কর্মকর্তা মোঃ নাসির উদ্দীন, রগুনাথ, অতিরিক্ত উপণ্ড পরিচালক প্ল্যানিং জেবুন নাহার, হাবিবুনেচ্ছা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপণ্ড পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আবদুচ সোবাহান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাটহাজারী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ আল মামুন শিকদার। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা রাশিদ শাহারিয়ার রিপন এর সঞ্চালন অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন মাশরুম উদ্যোক্তা ইয়াসিন আরাফাত। শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলোয়াত করেন হাফেজ মোহাম্মদ জাহেদ।
এ সময় বক্তারা ফারহাদাবাদ ইউনিয়নে স্থাপিত মাশরুম পল্লীর উপযোগিতা ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। মাঠদিবস অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ মাশরুম পল্লী ও ইফনাপ প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত পারিবারিক পুষ্টি বাগান পরিদর্শন করেন।
উল্লেখ্য, আমরা দৈনন্দিন যেসব খাবার খাই সেগুলোর চেয়ে মাশরুমের পুষ্টিগুণ তুলনামূলকভাবে বেশি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতি একশ গ্রাম মাশরুমে প্রোটিন ২৫-৩৫ গ্রাম, ভিটামিন ৫৭-৬০ গ্রাম ও ৫-৬ গ্রাম মিনারেল, শর্করা, উপকারী চর্বি ৪-৬ গ্রাম পাওয়া যায়। এতে আঁশের পরিমাণও খুবই সন্তোষজনক ও এর পরিমাণ প্রায় ১০-২৮%। এই পরিমাণটি অন্যান্য খাবারের তুলনায় অনেক বেশী। শুকনো মাশরুমে ৫৭-৬০% ভিটামিন ও মিনারেল থাকে যা আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খুবই কার্যকরী ভুমিকা পালন করে। এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকায় মাশরুম দেহকে সুরক্ষিত রাখতেও বিশেষ ভুমিকা রাখে। এই সময় উপণ্ড কৃষি কর্মকতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাইফুর রহমান, খালেদ হাসান, বিশ্বজিৎ চৌধুরী, জামাল উদ্দিন আহমেদ, প্রসেনজিৎ ভট্টাচার্য, সুনীল চাকমা, রোমেল বড়ুয়া, সায়েদুল ইসলাম ও হিমাদ্রি শেখর বড়ুয়া প্রমূখ।