রাত পোহালেই ভোট। দিনে রাতে ভোটের হিসাব কষছেন প্রার্থীরা। হিসাব কষছেন প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীর ভোটেরও। রাত পোহালেই বাড়ছে টেনশন। এখানে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ৬ জন। রাজিব আহমেদ রাজ্জি (টেলিফোন) শুধু কাগজে কলমে প্রার্থী। বর্তমানে ভোটের মাঠে লড়ছেন ৫ জন। তবে ভোটারদের বড় অংশের মতে ৮ তারিখের লড়াইটা হবে ত্রিমূখী। আর এই তিনজনই আওয়ামী লীগ নেতা। উপজেলার সর্বত্রই রয়েছে তাদের পরিচিতি। ছড়িয়ে ছিটিয়ে তিন জনই নানা কারণে সাধারণ ভোটারদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। চুড়ান্ত হিসেবে যিনি অধিক ভোটারের সমর্থন আদায় করতে পারবেন। তিনিই হাঁসবেন শেষ হাঁসিটা। ভোট আদায়ের সেই শৈল্পিক কাজে তারা প্রত্যেকেই এখন খুবই ব্যস্ত সময় পার করছেন। এরা হলেন বর্তমানে চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর (ঘোড়া), ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবু হানিফ (কাপ-পিরিচ) ও সাবেক চেয়ারম্যান মো. শের আলম (মোটরসাইকেল)। ফাঁকে তিন ইউনিয়নের অধিকাংশ ভোটারের মন জয় করে বৈতরনী পার হওয়ার চেষ্টা করছেন মো. মুখলেছুর রহমান (আনারস)।
সরজমিন অনুসন্ধানে প্রার্থী, সমর্থক ও ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভোট আদায়ের খেলায় সরাইলের ৯টি ইউনিয়নের আনাচে কানাছে ছুঁটে চলেছেন ৫ প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। প্রতি ঘন্টায় ও দিনেই ভোটের হিসাব কষছেন প্রত্যেক প্রার্থী। চুলছেড়া হিসাব কষছেন প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীও। কেউ দেখছেন সামান্য ভোটে পিছিয়ে আছেন। আবার কেউ দেখছেন পিছিয়ে আছেন বেশী ভোটের ব্যবধানে। পরে শুধু ব্যবধান কমানো নয় ভোটের সংখ্যা বাড়িয়ে জয়লাভের চেষ্টা করছেন অপর প্রার্থী। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে একই জায়গায় হানা দিচ্ছেন একাধিক প্রার্থী। প্রার্থী নীরবে বসে নিজের ঘাটতি চিহ্নিত করছেন। পরে ঘাটতি পূরণ করতে সেখানে দৌঁড়ঝাঁপ করছেন। আর বর্তমানে তাদের প্রতিটি মূহুর্ত পার হচ্ছে ভোট আদায়ের শৈল্পিক খেলায়। ৯টি ইউনিয়নের অধিকাংশ সচেতন ভোটাররা বলছেন, ৮ ই মে’র নির্বাচনে মূল লড়াইটা হবে ত্রিমূখী। আর এই তিন জনই হচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা। তাদের একজন রফিক উদ্দিন ঠাকুর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। একাধিকবার দলটির উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। একাধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন তিনি। অভিজ্ঞ এই রাজনীতিবিদ একজন দক্ষ সালিসকারকও। আওয়ামী লীগের নেতা ও ১০ বছর জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালনকালে তিনি উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নেই কমবেশী কাজ করেছেন। তার হাত ধরে দলীয় ও দলের বাহিরে একাধিক বলয় গড়ে ওঠেছে। তার নির্বাচনী মাঠের প্রত্যেকটি জায়গায় ওই কর্মী সমর্থকরা কাজ করছেন। তাই জয়লাভের বিষয়ে তিনি খুবই আশাবাদী। আরেক প্রার্থী বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষকের ছেলে মো. আবু হানিফ। ছাত্র জীবন থেকেই হানিফ আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। হানিফ সরাইল উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের (প্রস্তাবিত কমিটির) যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। গত পাঁচ বছর ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সেই সুবাদে গোটা উপজেলার উন্নয়ন, সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে ছিল তার নিয়মিত যাতায়ত। আর এভাবেই উপজেলার সর্বত্রই তার একটা গ্রহন যোগ্যতা তৈরী হয়েছে। সেটা কাজে লাগিয়েই তিনি ভোটের মাঠে লড়াইয় করছেন। আবু হানিফ শান্ত মেজাজের ঠান্ডা প্রকৃতির মানুষ। তাই জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে হানিফও অনেক এগিয়ে। আবু হানিফ বলেন, উপজেলার সকল শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য আমি নি:স্বার্থ ভাবে কাজ করেছি। তারা আমাকে সেই কাজের মূল্যায়ন করবেন। আলোচিত আরেক প্রার্থী সরাইল কলেজ শাখা ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মো. শের আলম। তিনি সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। রাজনৈতিক কর্মকা- ও জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করে তিনি উপজেলার বিভিন্ন স্তরের মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। তারও রয়েছে সামাজিক রাজনৈতিক বলয়। এসব শক্তিকে কাজে লাগিয়েই তিনি ভোটের মাঠে এগিয়ে যাচ্ছেন। শের আলম বলেন, জনগণ আমার শক্তি। আল্লাহ আমার সহায়। অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও সুন্দর পরিবেশে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আমার প্রতি ভোটারদের ব্যাপক সাড়া ও ভালবাসা পাচ্ছি। তাই জয়লাভের বিষয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী। গত নির্বাচনে সামান্য ভোটের ব্যবধানে আমি পরাজিত হয়েছিলাম। বিষয়টি জনগণের মনে দাগ কেটেছে। পরাজিত হয়েও আমি সর্বসময় মানুষের পাশে থেকে কাজ করেছি। সুখে দু:খে তাদের পাশে ছুটে গেছি। তাই তারাও আমাকে ভুলেনি। আগামী ৮ ই মে তারা আমার মোটরসাইকেল প্রতীকে ভোট নির্বাচিত করবে ইনশাল্লাহ
প্রসঙ্গত: সরাইল উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে বর্তমান ভোটার ২ লাখ ৭০ হাজার ৬৬৪। এর মধ্যে পুরূষ ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯৭৭। মহিলা ভোটার ১ লাখ ২৫ হাজার ৬৮৬। হিজড়া ১ জন। ৮৪ টি ভোট কেন্দ্রে ও ৬৫১ টি বুথে চলবে ভোট গ্রহন। ভোট গ্রহনের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।