সড়কে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার ভিড়ে রেলপথে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুহার তুলনামূলক কম। এ কারণে ট্রেনের যাত্রী চাহিদা বেশি। ডি-রেইল বা লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা রেলপথে বেশি হলেও সম্প্রতি মারাত্মক দুর্ঘটনা বেড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মুখোমুখি, পেছন থেকে ধাক্কা দেয়া কিংবা ক্রসিংয়ের সময়ে অন্য একটি ট্রেনের ওপর চালিয়ে দেয়ার মতো ঘটনা। যেখানে বাংলাদেশের জনগণের কাছে নিরাপদ ভ্রমণের জন্য পরিচিত পথ ছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই আত্মবিশ্বাস আমরা দিনদিন হারিয়ে ফেলছি। এমনকি রেললাইনে যাত্রা এখন অনিরাপদে পরিণত হয়েছে। ট্রেন ক্রসিংয়ের সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের খুবই সচেতন থাকতে হয়। এ ছাড়া যারা নিয়োজিত থাকে রাস্তা পারাপারের অনুমতি দেওয়া ও আটকানোর দায়িত্বে তাদেরও সচেতন থাকতে হয়। কিন্তু অনেক সময় নিজের চোখেও তাদের অসতর্ক থাকতে দেখা যায়। বর্তমানে রেলওয়ে কর্মকর্তা তাদের দায়িত্ব বিষয়ে অনেক অমনোযোগী ও অসতর্ক হয়ে পড়েছে। একটা বছরে বারবার শুধু লাইনম্যানদের অসতর্ক থাকার ফলে দুর্ঘটনা ঘটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো না। তাদের এমন মনে হতে পারে যে, সারা দিন তো ট্রেন চলছেই বা প্রতিদিন তো চলছেই তো চলুক না! আসলে, অলসতা আসার মতোই দায়িত্বটা কিন্তু তাদের বোঝা উচিত তাদের এক সেকেন্ড অসতর্কতা কিংবা অলসতা হতে পারে একজন মানুষের জীবন হারানোর কারণ। যা কি না হতে পারে একজন মা, বাবা, সন্তান কিংবা স্ত্রীর আজীবন কান্নার কারণ। যেমন, কিছুদিন আগে গাজীপুর দুটো ট্রেনের মর্মান্তিক সংঘর্ষ ঘটেছে। কয়েক মাস আগেও ঘটেছিল মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনা। কয়েক মাস আগের দুর্ঘটনাতে দোষারোপ করা হয়েছিল কর্মচারীদের অসতর্কতাকে। তাহলে এর শেষ কোথায়? আদৌ কি শেষ হবে এই অবহেলাজনিত দুর্ঘটনা। আমরা কি আবারও বলতে পারব, যে নিরাপদ ভ্রমণের অপর নাম বাংলাদেশ রেলওয়ে। মাঠ পর্যায়ে রেলকর্মীদের পাশাপাশি ট্রেন পরিচালনায় নানা অদক্ষতা উঠে এসেছে। তবে এসব দুর্ঘটনার জন্য কম জনবল, অবসরে যাওয়া কর্মীদের দিয়ে কাজ করানো, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ, শত বছর ধরে প্রাপ্য সুবিধা বাদ দেয়া বা কমিয়ে দেয়া, অতিরিক্ত কাজের ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধাবঞ্চিত করা, কর্মীদের পদোন্নতি বন্ধ রাখাকেও দায়ী করছেন রেলওয়েসংশ্লিষ্টরা। ফলে রেলওয়ের বিদ্যমান অবকাঠামো, রেলপথ, সেতু, ইঞ্জিন ও বগির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ, রেলওয়ের সিগন্যাল ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা না হলে এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক লোকবল ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে যথাযথ তদারকি করা না হলে রেলপথে দুর্ঘটনা ও জীবনহানি বন্ধ করা যাবে না। তাই অতি দ্রত রেলপথের সঠিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন।