দালালদের দেখানো প্রলোভনে অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি দিতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে বহু বাংলাদেশির হয় সাগরে সলিল সমাধি হয়েছে অথবা ঠাঁই হয়েছে দুর্গম জঙ্গলের গণকবরে। গণমাধ্যমে প্রায়ই এমন খবর প্রকাশ পেলেও এ অপচেষ্টা বন্ধ হয়নি। ভূমধ্যসাগর দিয়ে যত মানুষ ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করে সেই তালিকার শীর্ষ দশে আছে বাংলাদেশ। বিবিসির তথ্যমতে, প্রতি বছর প্রায় ৫ হাজার বাংলাদেশি এভাবে ইউরোপ ও অন্যান্য উন্নত দেশে যাওয়ার চেষ্টা করে। র্যাবের তথ্যমতে, ইউরোপে মানব পাঁচারের সঙ্গে দেশজুড়ে অন্তত ১০ থেকে ১৫টি চক্রের খবর পাওয়া গেছে। শরীয়তপুর, মাদারীপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নোয়াখালী এলাকা ঘিরে এসব শক্তিশালী দালাল চক্র গড়ে উঠেছে। ইউএনএইচসিআরের তথ্যমতে, ইউরোপে যাওয়ার জন্য ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২১ লাখ লোক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোট্ট নৌকা বা ট্রলারে করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছে। টাকা জোগাড়ে কেউ কেউ ভিটেমাটিও বিক্রি করে দিচ্ছে। কিন্তু ভাগ্যে জুটছে প্রতারণা, শারীরিক অত্যাচর, মৃত্যুসহ ভয়ানক যন্ত্রণা। ভাগ্যক্রমে যারা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে পারে, তারা হয়তো কাক্সিক্ষত দেশেও পৌঁছাতে পারে। তবে অভিজ্ঞ মহলের মতে, লিবিয়া থেকে এখন ইতালি যাওয়া প্রায় অসম্ভব। এক দালাল থেকে আরেক দালালের কাছে বিক্রি, শেষে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে আটক হয়ে দেশে ফেরত আসতে হচ্ছে। অবৈধভাবে যারা ইউরোপে যাচ্ছেন, সেখানে তাদের স্থায়ী আশ্রয় মিলছে না। পরিতাপের বিষয়, বিভিন্ন সময়ে দালালদের মাধ্যমে বিদেশে পাড়ি দিতে গিয়ে এমন স্বপ্নভঙ্গের বহু ঘটনা ঘটলেও তা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। বিশেষ করে যেভাবে দালালরা উন্নত জীবনের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে অবৈধ ও বিপদসংকুল পথে দেশের টগবগে যুবকদের ঠেলে দেয়, তা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। এজন্য সবার আগে প্রয়োজন এসব কাজে জড়িত বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি ও দালালদের নির্মূল করা। শুধু তাই নয়, এমন অপকর্মে যারা জড়িত, তাদের প্রত্যেককে শাস্তির আওতায় আনা। আমরা মনে করি, সাধারণ মানুষকেও এ বিপদসংকুল যাত্রার ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে, যাতে তারা প্রলোভন ও মিথ্যা আশ্বাসে অবৈধ কোনো প্রক্রিয়ায় কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বিদেশে পাড়ি না জমান। ভুলে গেলে চলবে না, দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই পুরো অভিবাসন প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠু পরিকল্পনার আওতায় আনা প্রয়োজন। জনশক্তি রপ্তানি খাতে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা দূর করার পাশাপাশি অবৈধ পন্থায় বিদেশ গমনের প্রবণতা হ্রাসে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলে আমরা মনে করি।