ভুল সংকেতে নিয়মিত ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রায় পৌনে ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনে গত এক মাসে তিনবার ভুল সংকেতের ঘটনা ঘটেছে। শুক্র ও শনিবারের ঘটনা ঘটেছে উন্নয়ন প্রকল্প চলমান এলাকায়। এক দশক ধরে ঢাকা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত তৃতীয় ও চতুর্থ রেললাইন নির্মাণের কাজ চলছে। এক যুগে প্রায় সম্পন্নের পথে কক্সবাজার রেলপথ। রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকাসংলগ্ন টঙ্গী জংশনও চলছে সনাতন সংকেত পদ্ধতিতে। ভারতীয় ঋণের প্রকল্পে অর্থছাড়ে ধীরগতি এবং অন্যান্য জটিলতায় ঠিকাদাররা সময়মতো বিল পাঁচ্ছেন না। এতে কাজ এগোচ্ছে না। প্রকল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত সিবিআইএস চালু করা সম্ভব নয়। বছরের পর বছর এসব প্রকল্প চলায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় কম্পিউটারভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় সংকেত ব্যবস্থা তথা কম্পিউটারবেইজড ইন্টারলিঙ্ক সিস্টেম (সিবিআইএস) নেই। সনাতন পদ্ধতির নন-ইন্টারলিঙ্ক ব্যবস্থায় মানুষ সংকেত দেন। মানুষ কাজ করলে ভুল হবেই। রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, পুরোনো সংকেত (ম্যানুয়াল) পদ্ধতিতে দক্ষ হয়ে উঠতে পারেননি নতুন নিয়োগ পাওয়া জনবল। আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে ঠিকাদারের সরবরাহ করা পয়েন্টসম্যান রেলের বিশেষায়িত কাজ জানেন না। এসব কারণে ভুল হচ্ছে। রেল দুর্ঘটনায় পড়ার অন্যতম কারণ সিগন্যাল অমান্য করা বা সিগন্যালিং ত্রুটি। কোনো কারণে যদি সিগন্যালে ত্রুটি দেখা দেয় কিংবা চালক অমান্য করেন তাহলে অনেক ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটে। রেলপথের ওপরে ক্রসিং থাকা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও যোগাযোগের প্রয়োজনেই অনেক সময় তা করতে হয়। তবে কোনো স্থানে নতুন রেললাইন নির্মাণ করলে প্রয়োজনে লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করে সেখানে গেটকিপার নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু দেশে এখনো ২ হাজার ৩১টি ঝুঁকিপূর্ণ রেলক্রসিং রয়েছে। সেসব স্থানে কোনো গেটকিপার নেই। নিরাপদ ট্রেন পরিচালনায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেলপথে পাথরের অপর্যাপ্ততা। পর্যাপ্ত পাথর থাকলে গতিবেগ বাড়লেও ট্রেনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে যায়। দুর্ঘটনা রোধে রেল কর্তৃপক্ষ রেলের গতি কমানো ও উদ্ধার কাজে ব্যবহারের জন্য ক্রেনকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এ ধরনের চিন্তা থেকে রেলকে বেরিয়ে আসতে হবে।’ রেলওয়ে পুলিশ বা আনসার বাহিনীকে প্রশিক্ষণ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা, রেলওয়ে হাসপাতাল এবং ডাক্তারদের এ ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবিলায় সক্রিয় করা উচিত। মেরামতের পেছনে কম টাকা খরচ হয় বলে রেল সব সময় বাহির থেকে লোকোমোটিভ ও কোচ কেনায় আগ্রহী। তাই নতুন রেললাইনের পাশাপাশি পুরোনো রেললাইনগুলো মেরামত করতে হবে। যেহেতু দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে রেলের করুন দশা কাটছে না, সেহেতু এ সংস্থার সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষকে গুরুত্ব বাড়াতে হবে।