আবারও ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে কাঁপলও দেশ, রাজশাহীসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় এ ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৪। ২৮ এপ্রিল রাত ৮টা ৫ মিনিটে এই ভূমিকম্প হয়। রাজশাহী ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও পাবনা জেলায় ভূকম্পন অনুভূত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে মৃদু ভূমিকম্প হওয়ায় এর কম্পন অনুভূত হয়নি অনেকের। কিন্তু এই মৃদু ভূমিকম্পই বড়ো ভূমিকম্পের আভাষ দেয়। ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে ঢাকার নাম। ভূ-স্তরে ইউরেশিয়ান প্লেটের অবস্থান বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে। এই প্লেটটির পাশেই ভারত-বার্মা প্লেট। সাম্প্রতিক সময়ে প্লেট দুটি অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠায় কয়েকদিন পর পরই হচ্ছে মৃদু ভূমিকম্প। সাম্প্রতিক ভূকম্পনগুলো মৃদু মাত্রার হলেও এগুলো বড় বিপর্যয়ের পূর্বাভাস। দেশে ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ঢাকা। বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলেই ভবন তৈরির ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা ধরণের অনিয়মের অভিযোগ উঠে থাকে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের এক গবেষণায় দেখা যায় বাংলাদেশে ভবন তৈরির ক্ষেত্রে জাতীয় বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করা, ভবনের নকশা অনুমোদন ও বাস্তবায়ন বা অঞ্চল পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ না নেয়ার মত নানা অনিয়মের কারণে বেশীরভাগ ভবনই খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ভূমিকম্পে ঢাকা মেট্রোপলিটনের এক শতাংশ ভবনও যদি ধ্বংস হয় তাহলে ৬,০০০ ভবন বিধ্বস্ত হবে। যার ফলে অন্তত তিন লাখ মানুষ সরাসরি হতাহত হবে। মূলত ভূমিকম্পে ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনায় দেশকে তিনটা জোনে ভাগ করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ, রংপুর থেকে শুরু করে সিলেটের এ জোনটা উচ্চঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ঢাকা, রাজশাহী থেকে শুরু করে কুমিল্লা, নোয়াখালী অঞ্চল মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ। আর দক্ষিণ-পূর্ব দিকটা নিম্নঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়ে থাকে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, যে ১৯৮৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১২টি মাঝারি মানের ভূমিকম্প বাংলাদেশ ও এর আশপাশ অঞ্চলে হয়েছে, যার অধিকাংশেরই উৎপত্তিস্থল ছিল ভারত; বিশেষ করে ত্রিপুরা, আসাম ও মিজোরাম অঞ্চলে। ১৯৮৮ সালে ৫.৮ মাত্রার ভূমিকম্প সিলেট অঞ্চল বেশ জোরেশোরে কেঁপে উঠে, যার স্থায়িত্ব ছিল ৫০ সেকেন্ডেরও বেশি। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম, বান্দরবন, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এলাকাগুলোতে ৫.৩ মাত্রার ভূকম্পন সংঘটিত হয়। ২০০৩ সালে পার্বত্য অঞ্চলে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল, যার স্থায়িত্ব ছিল প্রায় ৪০ সেকেন্ডের মতো। ২০২১ সালে ২ ফেব্রুয়ারির সকাল ৬টায়, ৭ জুলাই বিকাল ৩টা ও অক্টোবর মাসের ২৪ তারিখে মোট তিনটি ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে, যার স্থায়িত্ব ছিল ৩০ থেকে ৫০ সেকেন্ডের মতো। ২০২২ সালে ৩০ অক্টোবর ৪.৩ মাত্রার একটি ৪০ সেকেন্ড স্থায়িত্বের ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালে ঢাকাসহ সারা দেশে ৫ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ভূমিকম্প এমন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যাকে প্রতিরোধ করার কোনো উপায় মানুষের আয়ত্তে নেই। এমনকি এর পূর্বাভাস দেয়াও সম্ভব হয় না। তাই ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পূর্বপ্রস্তুতিই আসল। তাই জনগণকে সম্পৃক্ত করে জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সীমিত সম্পদ ও ক্ষমতার আওতার মধ্যেই এ দুর্যোগ মোকাবিলার ত্বরিত প্রস্তুতি নেয়া ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।