পরীক্ষানেয়া হয় মেধা যাচাইয়ের জন্য। কিন্তু প্রায় প্রতিটিপরীক্ষা এখন প্রহসনেপরিণত হয়েছে। একটি দুষ্টচক্র জাতির ভবিষ্যতকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কয়েক বছর ধরেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। পাবলিক পরীক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন নিয়োগ ও ভর্তি পরীক্ষায়ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর আসছে সংবাদমাধ্যমে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি দুরারোগ্য ব্যাধির মতো জেঁকে বসেছে। কোনোভাবেই এর হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি প্রেসের কর্মী থেকে শুরু করে ছাত্র-শিক্ষক, ব্যাংক কর্মকর্তা-অনেকেই এই চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে এর আগে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সর্বশেষ পরীক্ষায় আবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। পরীক্ষায় তিন ধাপে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। প্রথম ধাপে জালিয়াতির অভিযোগে ৭৪ জন এবং তৃতীয় ধাপে একই অভিযোগে ১৩ জনকে আটক করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। সব মিলিয়ে আটক ৮৭ জন। গত ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা চলাকালে উত্তরপত্র, ডিজিটাল ডিভাইসসহ মাদারীপুরে সাতজন এবং রাজবাড়ীতে একজন পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়। মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। রাজবাড়ীতে গ্রেপ্তার পরীক্ষার্থী পরে আদালতে দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এর আগে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপের নিয়োগ পরীক্ষায়ও জালিয়াতির অভিযোগে গাইবান্ধায় ৩৭, রংপুরে ১৯ ও দিনাজপুরে ১৮ জনকে আটক করা হয়। ওই সময় তাঁদের কাছ থেকে ২৪টি মাস্টারকার্ড, ২০টি ব্লুটুথ, ১৭টি মোবাইল ফোনসেট, ব্যাংক চেক ও স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়। পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে প্রতিবার একাধিক ব্যক্তি আটক হলেও কোনোবার পরীক্ষা বাতিল করেনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তারা জালিয়াতি রোধে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এর পরও ঠেকানো যাচ্ছে না প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা। প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো জঘন্য ও নিন্দনীয় একটি কাজের সঙ্গে জড়িতরা প্রকৃতপক্ষে দেশ এবং জাতির শত্রু। তাদের নীতিনৈতিকতা বলে কিছু নেই। শুধু অর্থের বিনিময়ে তারা যা খুশি তা-ই করতে পারে। প্রশ্নপত্র ফাঁস ও উত্তরপত্র জালিয়াতির ঘটনা আমাদের সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই জঘন্য অপরাধ প্রতিরোধের সহজ উপায় হচ্ছে অপরাধীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা প্রতিরোধে দেশে আইন আছে। জালিয়াতচক্রের সন্ধান যখন পাওয়া গেছে, তখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরো কঠোর হতে হবে। এই চক্রের সবাইকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা হোক।