গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সকাল ৮ থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত ১১৯ টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোথাও কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রগুলোতে দেখা যায়, আড়াল জি এল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ২ হাজার ৪৩৯ জন ভোটারের মধ্য সকাল ১০ টা পর্যন্ত ৮২ ভোট পড়েছে। তবে বেলা ১১ টা পর্যন্ত উপজেলার কোন কেন্দ্রে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি।
কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা এ কে এম লুৎফর রহমান জানান, সকাল ১০ টা পর্যন্ত ১১৯ কেন্দ্রে ৮% ভোট পড়েছে।
আড়াল জি এল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রিজাইডিং অফিসার এনামুল হক জানান, সকাল ১০ টা পর্যন্ত ৬ টি বুথে মোট ভোটারের মধ্য ৮২ ভোট পড়েছে। তবে সকাল থেকেই ভোটার উপস্থিতি ধীরগতি ছিল। ভোটাররা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট প্রদান করছে।
কড়িহাতা ইউনিয়নের রামপুর উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে (০৫ নং ওয়ার্ড) ৬ টি বুথে মোট ভোটার ২ হাজার ৬৮১ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ হাজার ৩৬৩ জন এবং নারী ভোটার ১ হাজার ৩১৮ জন।
ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার এস এম রানা জানান, সকাল ১০ টা পর্যন্ত মোট ১৭৭ টি ভোট পড়েছে।
ওই কেন্দ্রের রামপুর এবং পিরোজপুরের নারী ভোটার ছায়া রানী দে ও অনামিকা রানী দে জানান, বাড়ির কাজ শেষে ভিড় হবে ভেবে সকাল সাড়ে ৮ টায় দ্রুত কেন্দ্রে এসেছি। ভোট কেন্দ্র ফাকা দেখে যেমন ভালো লেগেছে। কোন রকম লাইনে দাঁড়ানো ছাড়াই ভোট দিতে পেরেছি। আবার খারাপও লেগেছে ভোটার উপস্থিতি কম দেখে। কারণ হিসেবে তারা বলেন, ভোটার উপস্থিতি থাকলে একটা আনন্দ ভাগাভাগি হয় একে অপরের সাথে। ভোটার উপস্থিতি কম থাকায় ভোট দিয়ে আনন্দ না নিয়েই বাড়ি ফিরছি।
একই মাঠের পশ্চিম পাশে রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আবু সাঈদ শোভন জানান, এ কেন্দ্রে মোট ভোটার ১ হাজার ৯৯৮ জন। তার মধ্য পুরুষ ভোটার ১ হাজার ১৬ জন এবং নারী ভোটার ৯৮২ জন। সকাল ১০ টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ১১৪ ভোট। যার ৭% ভোট কাস্টিং হয়েছে।
পিরোজপুর গ্রামের শিক্ষক মজিদ চন্দ্র সরকার বলেন, সকাল সকাল ভোট দিয়েছি। ভোটার উপস্থিতি একেবারেই কম। নাই বললেই চলে। এভাবে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হলে প্রার্থীরা তাদের প্রকৃত মূল্যায়ন পাবে না। কারণ, তারা নির্বাচনী প্রচারণায় যে পরিমান শ্রম ও সময় ব্যয় করেছে সে অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি করাতে পারেনি।
ভোটার ইব্রাহিম জানান, সকাল সাড়ে ৯ টায় কেন্দ্রে এসেছি ভোট দিতে। ভোট কেন্দ্রে এসেই দেখি ভোটার বিহীন বসে আছে নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। তাদের সাথে এক ঝাক মিডিয়া কর্মীদেরকেও মাঠে দেখা গেছে। ফাঁকা মাঠে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে ভোট কেন্দ্রের বুথে প্রবেশ করে ভোট দিয়েছি।
অপর ভোটার আইনুদ্দিন জানান, মনে একটা আশঙ্কা নিয়ে ভোট কেন্দ্রে এসেছি। গেল উপজেলা নির্বাচনে বিকেলে কেন্দ্রে এসে দেখি আমার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। সেই শঙ্কা থেকেই এবার সকালেই কেন্দ্রে এসে পড়েছি ভোট দিতে। তবে ভোটার উপস্থিতি কম থাকায় মনে হলো মানুষ ভোট দেওয়া থেকে দিন দিন বিরত রয়েছে। এর কারণ, হিসেবে তিনি বলেন, দেশের সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন না হওয়ায় সাধারণ ভোটাররা (যারা রাজনীতির সাথে জড়িত না) তারা ভোট দিতে আসে না। এখন ধান কাটার সময়। কাজ রেখে কেউ কেন্দ্রে আসতে চায় না।
কাপাসিয়া উপজেলা একটি কৃষি নির্ভর এলাকা হিসেবে পরিচিত। এ অঞ্চলের প্রায় ৬০/৭০ ভাগ পরিবার কৃষির উপর নির্ভরশীল বলে জানান স্থানীয়রা। আবহাওয়া না রৌদ্র না বৃষ্টি বুঝা না যাওয়ায় কৃষকেরা তাদের ধান শুকানো ও ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কা থাকায় দুপুরের পর কেন্দ্রে ভোট দিতে যাবেন বলেও স্থানীয়দের ধারণা ছিলো।
এ উপজেলায় ১১ টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ৩ লাখ ১৫ হাজার ৫১৯ জন। এর মধ্য পুরুষ ১ লাখ ৫৭ হাজার ৬১৭ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৫৭ হাজার ৯০২ জন। কোন ধরনের অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা ছাড়াই ভোটাররা তাদের ভোট প্রদান করছেন।
সকাল ৮ টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হলেও দুপুর ১২ টা পর্যন্ত উপজেলার ১১৯ কেন্দ্রে ১৪% ভোট পড়েছে। কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা এ কে এম লুৎফর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
উপজেলার ঘাগটিয়া ইউনিয়নের কামারগাও উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপুর ১২ টায় কথা হয় ওই ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবুল কাশেম মীরের সাথে। ভোটার উপস্থিতি কম থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, কাপাসিয়া উপজেলার বেশিরভাগ পরিবার ধানসহ বিভিন্ন মৌসুমি কৃষি কাজ ও ব্যবসার সাথে জড়িত। তাই অনেকে ধান কাটা মৌসুমে তারা বাড়ির কাজ শেষ করে ভোট দিতে আসবে বলেও ধারণা ছিলো।
কামারগাও গ্রামের দেলোয়ারা বেগম ও জাহানারা বেগম জানান, এবারের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি সব কেন্দ্রেই কম। এটা ভোট কেন্দ্র না অন্য কিছু। নির্বাচন সময়ে যেখানে উৎসব উৎসব মনে হতো সবার মনে ও কেন্দ্র গুলোতে এখন আর সেই ইমেজ নাই। ভোট কেন্দ্রে আসলে ভাল লাগে না।
কামারগাও উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার সত্তোর্ধ শামসুল হক জানান, বেলা সাড়ে ১১ টায় কেন্দ্রে এসে দেখি ভোট কেন্দ্র একেবারেই ফাঁকা। আনসার ও পুলিশ সদস্যদের দেখে মনে হয় যেন কোন সরকারি অফিসে আসছি। এটা কোন ভোট কেন্দ্র না। ভোট দিতে এখন আর মানুষ তাদের বাড়ির কাজ ফেলে ভোট দিতে আসে না।
অপর ভোটার মন্টু মিয়া বলেন, বর্তমান সময়ে বোরো ধান কাটার মৌসুম চলছে। এ অঞ্চলের বেশিরভাগ পরিবার তাদের ক্ষেতের ধান ঘরে তুলছে বা কেউ তোলার জন্য ক্ষেতে কাজ করছে। তাছাড়া বর্তমান সময়ে একজন দিন মজুরের দৈনিক হাজিরা হাজার টাকা। বাড়ির কৃষকেরা তাদের ধান কাটার জন্য দিন মজুর নিয়ে কাজ না শেষ হওয়া পর্যন্ত ভোট দিতে আসে না। কারণ, কৃষক এসে পড়লে দিন মজুর ফাঁকি দেয়।
শাখাওয়াত হোসেন জানান, প্রায় এক যুগ যাবত ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কম। আগে নির্বাচন হলে তার আগের দিন এলাকায় ও কেন্দ্রের আশপাশে ঈদের দিনের মতো মনে হতো। এখন আর নির্বাচনের সময় তেমন উৎসব দেখা যায় না। তাছাড়া ধান কাটার মৌসুম থাকায় তারা কাজ শেষ করে ৩ টার দিকে ভোট দিতে আসতে পারে।
কামারগাও উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার শাহীন পারভেজ বলেন, এ কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ হাজার ৫৮৬ জন। তার মধ্যে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত ২৮৫ জন ভোটার তাদের ভোট প্রদান করছে। যার ৯% ভোট কাস্টিং হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, অনেক কৃষক তাদের পাকা ধান উঠান থেকে ঘরে তুলে শেষ সময়ে ভোট কেন্দ্রে এসেছে। দুপুরের পর থেকে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা বেড়েছে। তবে কোথাও কোন অনিয়ম হয়নি।