দেশজুড়ে চলমান দাবদাহে বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। ক্রমবর্ধমান এই চাহিদা পূরণের চেষ্টায় রেকর্ড হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। এর পরও ঢাকার বাইরের জেলা-উপজেলা শহরসহ গ্রামাঞ্চলে ছয় থেকে আট ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। ভাপসা গরমে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ গ্রামাঞ্চলের মানুষ। সকাল হোক বা রাত, যখন-তখন হুটহাট চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। কদিন আগেও ঢাকায় বিদ্যুতে স্বস্তি থাকলেও চিত্রটা এখন পাল্টে গেছে। রাজধানীতে এমনিতেই আলো-বাতাসের অভাব। এর সঙ্গে লোডশেডিং যোগ হওয়ায় মানুষের কষ্ট অনেক বেড়েছে। তবে সরকার সাধ্যানুযায়ী উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটছে না কোনোভাবেই। বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়লেও ঘাটতি এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট। উৎপাদিত হচ্ছে ১৩ থেকে সাড়ে ১৫ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত। প্রকৃত লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরও অনেক বেশি। গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছানো বিতরণ সংস্থার হিসাবেও বাড়তি লোডশেডিংয়ের তথ্য পাওয়া গেছে। ২৯ এপ্রিল সবচেয়ে বড় বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) একাই লোডশেডিং করেছে ৩ হাজার ৪৮৩ মেগাওয়াট। তাদের চাহিদা ৯ হাজার ৪৮০ মেগাওয়াটের বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ৫ হাজার ৯৯৭ মেগাওয়াট। এর অর্থ, ৩৭ শতাংশ ঘাটতি নিয়েই আরইবির এলাকা চলছে। এরমধ্যে ময়মনসিংহে লোডশেডিংয়ের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। এরপরই চট্টগ্রাম, রংপুর, কুমিল্লা, রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল অঞ্চল ও ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোয় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। জ্বালানি তেলচালিত কেন্দ্র থেকে লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে উৎপাদন করা যাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে সরকারকে জ্বালানি তেলের সরবরাহ বাড়াতে হবে। বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে শুধু সংশ্লিষ্ট এলাকার জনজীবনই বিপর্যস্ত হচ্ছে না, শিল্প ও কৃষি উৎপাদনও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। একসময় কৃষি ও শিল্পে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বসতবাড়ি ও মার্কেটে লোডশেডিং করা হতো। এখন কোনোটাই ভালোভাবে সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। বর্ধিত চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের উচিত ছিল জ্বালানিতে কীভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া যাবে, সেদিকে নজর দেওয়া। কিন্তু সেটি না করে তারা একদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্র বাড়িয়ে চলেছে, অন্যদিকে জ্বালানি খাতকে আমদানিনির্ভর করে ফেলেছে। সরকার সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল, সেটাও অর্জিত হলো না। শত ভাগ ঘরে বিদ্যুৎ দিতে হলে সৌরবিদ্যুতের জোগানও বাড়াতে হবে। ফলে শুধু ডলার-সংকটের দোহাই দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। শিল্পকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়াতেই হবে। লোডশেডিং করে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নেওয়া সম্ভব না।