প্রচন্ড উত্তপ্ত বাতাস এবং হাঁসফাঁস করা প্রচন্ড গরমে জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। দেশ জুড়ে তাপপ্রবাহ বইছে। তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মানুষ। হিট স্ট্রোক, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ বালাই ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে গরমজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়া রোগী বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু, বৃদ্ধ ও কো-মর্বিডিটির (অন্যান্য রোগে আক্রান্ত) রোগীরা। চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গরমে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। প্রচণ্ড গরমের কারণে দেশের অনেক স্থানে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে কয়েকজনের মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে। চিকিৎসকরা বলেছেন, এরকম তীব্র গরমের সময় সতর্ক না থাকলে শারীরিক নানা সমস্যার পাশাপাশি হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট। কোনো কারণে শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রির বেশি হয়ে গেলে মানুষের রক্তচাপ কমে যায়, এমনকি অচেতনও হয়ে পড়তে পারে। এ সমস্যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘হিট স্ট্রোক’ বলে। যথাসময়ে চিকিৎসা না করলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। আগে আমরা ঋতু ধরে বলতে পারতাম কখন কী হবে। কিন্তু এখন সেটা বলা সম্ভব না। এটা শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে না, সারা বিশ্বেই এমন অবস্থা। এটার জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছি। আরেকটা বিষয় হলো শিল্পায়নের আগে যে তাপমাত্রা ছিল, শিল্পায়নের পর তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বেড়ে গেছে। ফলে আমরা যে উষ্ণতার দিকে যাচ্ছি, সেটা তো আগে থেকেই ধারণা করা হয়েছিল। এখন সেটাই হচ্ছে।” বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষের শরীরও গরম হয়ে যায়। এর ফলে রক্তনালীগুলো খুলে যায়। এর জের ধরে রক্ত চাপ কমে যায় যে কারণে সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করা হৃদপিণ্ডের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। এসব কারণে মৃদু কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে যার মধ্যে রয়েছে ত্বকে ফুসকুড়ি পড়া, চুলকানি এবং পা ফুলে যাওয়া যা রক্তনালী উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে হয়ে থাকে। এছাড়াও প্রচুর ঘাম হওয়ার কারণে শরীরে তরল পদার্থ ও লবণের পরিমাণ কমে যায়, গুরুতর ক্ষেত্রে দেহে এ-দুটো জিনিসের মধ্যে যে ভারসাম্য আছে তাতেও পরিবর্তন ঘটে। হিট স্ট্রোক থেকে বাচঁতে হলে কিছু বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে যেমন যথাসম্ভব ঘরের ভেতরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকতে হবে। প্রচন্ড রোদে বাইরে যাওয়ার সময় টুপি বা ক্যাপ অথবা ছাতা ব্যবহার করতে হবে প্রচুর পরিমাণে পানি বা খাবার স্যালাইন অথবা ফলের রস পান করতে হবে। রোদে দীর্ঘ সময় ঘোরাঘুরি করা যাবে না। গ্রীষ্মকালে তীব্র শারীরিক পরিশ্রম এড়িয়ে চলতে হবে।