ফিটনেসবিহীন ও লক্কড়ঝক্কড় গাড়ির দখলে রাজধানীর সড়ক। রুটপারমিট ছাড়াই রাজপথে চলছে অনেক বাস। নির্ধারিত রুটে চলে না অনেক বাস। বরং নোংরা সিট ও লক্কড়ঝক্কড় বাসেই গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। ফলে রাজধানীর গণপরিবহনে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি হজম করতে হচ্ছে। মূলত এক শ্রেণির পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আশির দশক থেকেই ঢাকার গণপরিবহনের মূল ভরসা বাস। এর পরও বাসের কেন এমন দশা? রাজধানীতে প্রায় ছয় হাজার বাস ও মিনিবাস চলাচল করে। এসব বাসের মালিক দুই হাজারের বেশি। মালিকেরা বেশি আয়ের আশায় চুক্তিতে চালকের হাতে বাস ছেড়ে দেন। বাস-মিনিবাসের মালিকদের একটি বড় অংশ রাজনৈতিক নেতা, কর্মী বা প্রভাবশালী ব্যক্তি। ফলে তাঁদের ওপর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই। ইচ্ছেমতো বাস পরিচালনা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবহন খাতে নিয়মিত চাঁদাবাজিও হয়। বিপুল চাঁদাবাজির বিষয়টি পরিবহনের ভাড়া নির্ধারণের সময় আমলে নেওয়া হয় না। তাই চাঁদার টাকা তুলতে পরিবহনের মালিকেরা বাড়তি ভাড়া আদায় করেন। বাসের আকৃতি পরিবর্তন করে বেশি যাত্রী পরিবহনের চেষ্টা করা হয়। এ কারণেই রক্ষণাবেক্ষণে টাকা খরচ করতে চান না পরিবহনের মালিকেরা। এমনকি আইনের প্রয়োগের অভাব রয়েছে। বাসের আকৃতি পরিবর্তন কিংবা যাত্রীদের স্বচ্ছন্দ ঠিক আছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব বিআরটিএর। সংস্থাটি দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। ঢাকা মহানগরীতে চলমান বাস-মিনিবাসের মধ্যে প্রায় ৬৮ শতাংশের দরজা-জানালা ভাঙা। বসার সিট ছেঁড়া। ৮০ শতাংশ বাস-মিনিবাসের সিটে দুই স্তরের কাঠামো (স্টিল ও ফোম/কাপড়) নেই। আর যেসব বাসে স্টিলের কাঠামোর ভেতর ফোম বা কাপড়ের স্তর রয়েছে, সেগুলোরও অধিকাংশ ছেঁড়া। তাছাড়া রাজধানীর অধিকাংশ বাসের পেছনের সিগন্যালিং লাইটগুলো অকেজো। কিছুকিছু বাস-মিনিবাসে পাখা থাকলেও বেশিরভাগই নষ্ট থাকে। আর এসব বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা নেই বললেই চলে। তবে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে দ্রুত এর লাগাম টানতে হবে। কেননা- সড়ক পরিবহন আইনে শাস্তি ও জরিমানা বাড়ানো এবং পরে আইনের বিধিমালা করা হলেও মাঠপর্যায়ে প্রয়োগের অভাবে থামানো যাচ্ছে না ফিটনেসবিহীন যানবাহন। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফিটনেস ও সড়কের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।