ময়মনসিংহের ভালুকায় স্ত্রী হাজেরা খাতুনকে গলাকেটে হত্যা ঘটনার প্রধান আসামি নিহতের স্বামী সোহেল মিয়াকে (৪০)কে বুধবার গাজীপুরের টুঙ্গী রেলস্টেশন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে ভালুকা মডেল থানা পুলিশ। এর আগে প্রধান আসামীর মা সুফিয়া খাতুনকে (৫৭) গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার অপর দুই আসামি সোহেলের ভাই দোয়েল মিয়া (৩৭) ও তার খালা মিনারা খাতুন (৬০ কে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুরিশ।
ভালুকা মডেল থানার অফিসার ইনচার্চ মো. শাহ্ কামাল আকন্দ জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নিরুপম নাগ বুধবার সন্ধ্যায় সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান চালিয়ে গাজীপুর জেলার টঙ্গী রেল স্টেশন এলাকার একটি গেস্টহাউজ থেকে স্ত্রীকে গলাকেটে হত্যার প্রধান আসামি সোহেল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। সোহেলের স্বীকারোক্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলের পাশের একটি ডুবা থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করে। ঘাতক সোহেল তার স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে এবং সে পুলিশকে জানিয়েছে, তার স্ত্রী একটি পোষাক কারখানায় চাকুরি করতো। স্ত্রী সেখানে অন্য এক পুরুষের সাথে পরকীয়া লিপ্ত ছিল। তাকে চাকরি না করার জন্য নিষেধ করা হয়েছিল। এ নিয়ে তাদের সংসারে প্রায় সময় ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকতো। এর আগেও সে তার স্ত্রীকে বেশ কয়েক বার হত্যার পরিকল্পনা করে ব্যর্থ হয়েছে। তার স্ত্রীকে হত্যাকান্ডের আগের দিন তার ছেলে সাব্বিরকে তার নানা বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং বড় ছেলে হেফজ পড়ূয়া সানি মাদ্রাসায় থাকায় স্ত্রীকে খুন করতে তার কোন সমস্যা হয়নি।
ঘাতক সোহেল তার স্ত্রীকে প্রথমে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে শ^াসরোধে হত্যা করে। লাশ ঘর থেকে বাড়ীর পাশে পুকুর পাড়ে নিয়ে রাখে। পরে ভোররাতে লাশ পাশের ধান ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে মৃত স্ত্রীকে জবাই করে পালিয়ে যায়। হত্যাকান্ড ঘটানোর আগে ঘাতক সোহেলের মুখে দাড়ি ছিল। পুলিশের চোখ ফাঁকি দেয়ার জন্য সে দাড়ি কেটে ছদ্ববেশ ধারন করে। চলে যায় খুলনা এক বন্ধুর বাড়িতে। সেখানে গিয়ে বন্ধুর সাক্ষাত না পেয়ে চলে যায় ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায়। ভাঙ্গাতে বেশিক্ষন অবস্থান না করে মঙ্গলবার মধ্যরাতে সে চলে যায় ঢাকার গুলশানে। সেখান থেকে চলে যায় সাভার হয়ে আশুলিয়ায়। লোকেশন রানিং থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারছিল না। বুধবার দুপুরে সে টঙ্গীর রেল স্টেশন এলাকার একটি গেস্টহাউজে উঠলে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ১৭/১৮বছর পূর্বে উপজেলার পশ্চিম পশ্চিমকাচিনা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত আজহার আলীর ছেলে সোহেল রানার সাথে পালগাঁও গ্রামের হাছেন আলীর মেয়ে হাজেরা খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই তাদের সংসারে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো। স্বামী সোহেল রানা তাঁর ছোট ভাই দোয়েলের সাথে ঢাকায় বাসের হেলপারি করতো। স্ত্রী হাজেরা খাতুন উপজেলার কাশর এলাকায় টিএম টেক্সটাইল মিলে চাকুরি করতেন। স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে পরকীয়া নিয়ে সন্দেহ করতো। পরকীয়া সন্দেহেই সোমবার (৬ মে) রাতের সোহেল তাঁর স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে ছুরি দিয়ে মৃত স্ত্রীকে জবাই করে বাড়ির পাশে ধান ক্ষেতে ফেলে রাখে। ঘটনা পর থেকেই সোহেল পলাতক। এ হত্যার ঘটনায় নিহতের বাবা বাদি হয়ে মেয়ে জামাইসহ চারজনকে আসামি করে মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন, নিহতের স্বামী সোহেল রানা (৪০), তাঁর শাশুড়ি সুফিয়া খাতুন (৫৭), দেবর দোয়েল মিয়া (৩৭) ও খালা শাশুড়ি মিনারা খাতুন (৬০)। তাঁদের সবার বাড়ি উপজেলা পশ্চিম কাচিনা গ্রামে।