সারা দেশে সড়ক পথের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা উন্নত বিশ্বের দেশগুলিতেও ঘটে। তবে আমাদের দেশে যেভাবে প্রতিদিন ঘটে এবং নিহত হয় ঠিক এত বেশি শোনা যায় না। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু যেন বাংলাদেশের প্রতিদিনকার অভিজ্ঞতার অংশ। দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র উঠে এলেও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পারেনি সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। পরিবহণ খাতে মেগা প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, গড়ে উঠছে বড় বড় অবকাঠামো। তবে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ অনুপাতে গণপরিবহণ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসেনি। উলটো প্রতিবছর সড়কে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েই চলছে। যদিও প্রাণহানির সংখ্যা নিয়ে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনেও ভিন্নতা রয়েছে। এবং দেশের সার্বিক অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটিএ ও সড়ক পরিবহণ মন্ত্রণালয়ে রোড সেফটি ইউনিট গঠিত হলেও মূলত সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কোনো গবেষণা কার্যক্রম নেই। নেই কোনো বাজেট বরাদ্দ। ফলে প্রতিবছর সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে। ঈদসহ বিভিন্ন ছুটির মৌসুমে সড়কে মৃত্যুর মিছিল যেন বেড়ে যায়। প্রতি বছর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলেও কর্তাব্যক্তিরা যেন হাত গুটিয়ে বসে আছেন। আমরা মধ্যম আয়ের দেশ হতে চাই ও উন্নত দেশের তালিকায় নাম লেখাতে চাই অথচ আমাদের সড়ক পরিবহন এখনো তৃতীয় বিশ্বের। সড়কে বছরে যে প্রাণহানি হয় যুদ্ধরত অনেক দেশেও এত প্রাণহানি হয় না। বিভিন্ন খাতে আমরা অভূতপূর্ব উন্নয়ন করতে পারলেও স্বাধীনতার পর থেকেই অব্যবস্থাপনা ও সড়কে মৃত্যু যেন আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার নিত্যসঙ্গী। প্রধান উপার্জনকারীর বিদায়ে অনেক পরিবারকে পথে নামতে হচ্ছে। আবার পঙ্গুত্ব বরণ করা ব্যক্তিরাও পরিবার ও সমাজের জন্য বোঝা হিসেবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এছাড়াও সড়কে প্রাণহানি আমাদের মোট জাতীয় উৎপাদন বা জিডিপিতেও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব রাখছে। দিনের পর দিন সড়কে প্রাণহানি চলছে অথচ মনে হয় দায়িত্ব নেয়ার কেউ নেই। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতের সঙ্গে জড়িত যানবাহন, পরিবহন মালিক, চালক, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি), ট্রাফিক পুলিশ ও জনগণ। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে এদের সবারই নিজ নিজ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। সড়কে আইনের শাসন বাস্তবায়নে বিভিন্ন দায়িত্বশীল সংস্থাকে কঠোর হতে হবে। অনিয়মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করতে পারলেই সড়ক দুর্ঘটনাও কমে আসবে। তাই সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও আইনের প্রয়োগ নিশ্চিতে ট্রাফিক পুলিশ ও বিআরটিসিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ভূমিকার প্রয়োজন। জাতিগত শক্তির নিদারুণ অপচয় রোধে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেবে এ কামনা করছি।