রাজধানী ঢাকা ঘন-বসতির জায়গা এখান বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে মানুষ বসবাস করে। স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও এখানে মানুষ নিরাপদ নয়। বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা। রাজধানীতে যত্রতত্র আবাসনের কারণে দখল হয়ে যাচ্ছে জলাশয়। অন্যদিকে নদী, খাল-বিল, জলাশয়ের পানি ব্যবহারযোগ্য না হওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর ভরসা করতে হচ্ছে। এতে দিনদিন নিচে নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও। এভাবে চলতে থাকলে পরিবেশে বিপর্যয় নেমে আসবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পাউবোর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালে ঢাকায় পানির স্তর ছিল ২৫ মিটারে, যা ২০০৫ সালে ৪৫ মিটার, ২০১০ সালে ৬০ মিটার এবং ২০২৪ সালে এসে ৮৬ মিটারে নেমেছে। প্রতি বছরই ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দুই থেকে তিন মিটার নিচে নেমে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জানা যায়, বর্তমানে পানির চাহিদা প্রচুর বাড়ছে, তবে পানির পরিমাণ বাড়ছে না। ব্যবহারযোগ্য পানির পরিমাণ কমে আসছে। ঢাকায় যেখানে ৫০ বছর আগে ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার দুই থেকে তিন মিটারের মধ্যে ছিল, বর্তমানে সেখানে ৮৬ মিটারে নেমে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই অ্যালার্মিং। তবে কিছুকিছু এলাকায় বোরো মৌসুমে পানির লেয়ার নিচে নামলেও আবার বৃষ্টির সময়ে পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসে। ঢাকায় বছরে এক থেকে দুই মিটার পর্যন্ত পানির লেয়ার নিচে নেমে যাচ্ছে। ঢাকার বাইরে সেন্টিমিটার হারে নামছে। তবে উদ্বেগের ব্যাপার হলো, ব্যবহারযোগ্য পানি আছে কি না, কত পরিমাণ আছে-এসব বিষয় দেখার মতো কেউ নেই। অন্যদিকে যেখানে একটি আদর্শ শহরে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ জলাভূমি থাকা আবশ্যক। সেখানে রাজধানী ঢাকায় জলাভূমি রয়েছে ৩ শতাংশেরও কম। স্বাধীনতার পর থেকে ঢাকায় একের পর এক জলাভূমি ভরাট করে বহুতল ভবন, বিপণিবিতান, সরকারি দপ্তর গড়ে উঠছে, যা এ নগরবাসীর জন্য চরম বিপর্যয় ডেকে আনছে; গ্রীষ্মে দাবদাহ বর্ষায় জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে; দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীর। ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৮৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত সময়কালে হারিয়ে গেছে ঢাকার ১০ হাজার হেক্টরের বেশি জলাভূমি, খাল ও নিম্নাঞ্চল। জলাশয় ভরাটের এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০৩১ সাল নাগাদ ঢাকা জলাশয় ও নিম্নভূমির পরিমাণ আয়তনের ১০ শতাংশের নিচে নেমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যায় পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে অবনতির দিকে যাচ্ছে। জলাশয় ভরাটকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আগামীতে আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করার আগেই সরকার ওই বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে সঠিক সমাধান করা হোক।