দেশের দরিদ্রতম ২০ শতাংশ পরিবার মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবায় সরকারি সুবিধার ২০ শতাংশও ভোগ করতে পারে না। দরিদ্র জনসংখ্যার চাহিদা পূরণের জন্য সরকারের সম্পদ বরাদ্দও অপর্যাপ্ত। চিকিৎসকের ফি, রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ, ক্রমাগতভাবে দাম বাড়তে থাকা ওষুধ ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কেনা-সব মিলিয়ে চিকিৎসার ব্যয় ক্রমেই বাড়ছে। ফলে দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত মানুষের পক্ষে অসুখবিসুখে চিকিৎসা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তদুপরি সরকারি হাসপাতালগুলোর সেবা নিয়েও রয়েছে অনেক অভিযোগ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক বা উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক ও সেবাদাতা লোকবলের অভাব, রোগ নির্ণয় যন্ত্রপাতি অকেজো বা না থাকা, বিনা মূল্যের ওষুধ না পাওয়া-এমনই আরো অনেক অভিযোগ। নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে অতি উচ্চ মূল্যের বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতালে যাওয়াও সম্ভব হয় না। ফলে প্রতিনিয়ত অনেক দরিদ্র রোগী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়। দেশের ৪৬ শতাংশ মানুষ চিকিৎসা খরচ মেটাতে কোনো না কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে ওষুধের দাম। বাড়ছে অন্যান্য খরচও। ফলে উচ্চ ব্যয়ের কারণে বহু মানুষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পারছে না। যেমন, দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ গ্যাস্ট্রিক, রক্তচাপ, বাতজ্বর, হাঁপানি ও ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগলেও তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি কোনো ধরনের চিকিৎসাই নেয় না। এছাড়াও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হলে তাদের চিকিৎসার ব্যয় আরো বৃদ্ধি পায়, যা বহন করা তাদের পক্ষে আরো অসম্ভব হয়ে পড়ে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে তদুপরি আছে দুর্নীতি ও অনিয়ম। তাই সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি বরাদ্দের সর্বোত্তম ব্যবহারও নিশ্চিত করতে হবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে; অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যসেবায় প্রান্তিক মানুষের অভিগম্যতা বৃদ্ধি করতে হবে। বাজেটের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্বাস্থ্য খাতের ম্যানেজারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া শূন্যপদে নিয়োগ প্রদান এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নতুন পদ সৃষ্টি; অসংক্রামক রোগের ব্যাপকতা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিরোধমূলক সেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন লেভেলের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের অর্গানোগ্রামের সংশোধন করতে হবে। জটিল ও সময়সাপেক্ষ প্রকিউরমেন্ট ও টেন্ডারিং প্রক্রিয়ার আধুনিকীকরণের মাধ্যমে ত্বরান্বিত করতে হবে। যেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড নিশ্চিত হয়।