রাজশাহীর বাগমারায় বিদ্যালয়ের ভবন নির্মান কাজ করতে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে ঠিকাদার সহ শ্রমিকরা। সেই সাথে তাদের কাছে থাকা নগদ অর্থ ছিনতাই এর অভিযোগ পাওয়া গেছে সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে ঠিকাদাররা ওই কাজের জন্য গেলে তাদেরকে হত্যা করা হবে বলেও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে। এ ঘটনায় বাগমারা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে হামলার শিকার ওই কাজের হেড মিস্ত্রী জাহিদুল ইসলাম। ঠিকাদার, হেডমিস্ত্রী সহ সহযোগীদের উপর হামলার ঘটনায় দ্রুত সময়ের মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত উপজেলার সকল সরকারি উন্নয়ন কাজ বন্ধের ডাক দিয়ে প্রতিবাদ সভা করেছে নির্মান শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরা। রোববার বেলা সাড়ে ১১ টায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এদিকে থানার লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের সমসপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবনের নির্মান করা চলমান রয়েছে। বিদ্যালয়ের নির্মান কাজ শুরুর পর থেকে সমসপাড়া এলাকার কিশোর গ্যাং চক্রের ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা চাঁদা দাবী করে আসছিল। এরইমধ্যে বিদ্যালয়ের পিয়ন টাকাও নিয়েছে তাদের কাজ থেকে। টাকা ছাড়া কোন কাজ করতে দিবে না তারা বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। প্রতি দিনের মতো গত ২৫ মে সমসপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মানাধীন কাজ করতে যায় শ্রমিকরা। সকাল ৮টায় কাজে যাওয়ার পর সমসপাড়া গ্রামের ক্যাডার বাহিনীর সদস্য মজিবর রহমানের ছেলে রাব্বি, মৃত-আব্দুর রহমানের ছেলে শেখ ফরিদ, ময়েন উদ্দিনের ছেলে জুয়েল রানা, জাহিদুল ইসলামের ছেলে জয় এবং আন্টুর ছেলে ইমন আলী মিলে রশি দিয়ে তাদের হাত বেধে রাখে প্রায় ৩ ঘন্টা।
তারা অবৈধভাবে সমসপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে নির্মান কাজের সহযোগী মামুন, রুবেল, জামাল এবং জিয়ার হাত রশি দিয়ে বেধে রাখে। সেই সাথে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় তারা। পরবর্তীতে ওই কাজের ঠিকাদার এমদাদুল হক বিদ্যালয়ে গেলে তাকেও মারপিট করে। ঠিকাদার এমদাদুল হককে আটকে রেখে জোর পূর্বক তার ফোন নম্বর থেকে হেড মিস্ত্রী জাহিদুল ইসলামকে ডাকে। জাহিদুল ইসলাম সমসপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌঁছা মাত্র তাকে বেধরড় মারপিট করে এবং বিদ্যালয়ের আরসিসি পিলারের সাথে রশি দিয়ে বেধে রাখে। পরে তাদের আত্মচিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসলে ক্যাডার সদস্যরা পালিয়ে যায়। ক্যাডার সদস্যদের মারপিটে আহত হয়ে পড়ে ঠিকাদার এমদাদুল হক এবং হেড মিস্ত্রী জাহিদুল ইসলাম। ঘটনাস্থল থেকে তাদেরকে উদ্ধার করে স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। হামলার ঘটনায় শনিবার বিকেলে বাগমারা থানায় ৫ জনের নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগ দায়ের করা হলেও কাউকে গ্রেপ্তার না করায় আতঙ্ক বিরাজ করছে ঠিকাদার সহ শ্রমিকদের মধ্যে।
এ সময় সন্ত্রাসী হামলার শিকার জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা সরকারি কাজ করছিলাম। আমরা কেন তাদের চাঁদা দিবো। সরকারি নিয়ম মোতাবেক বিদ্যালয়ের কাজ হবে। এরইমধ্যে বিদ্যালয়ের পিয়ন ফরিদ অনেক গুলো লোহার রড চুরি করে বিক্রয় করে দিয়েছে। সেই সাথে জোঁর পূর্বক চাঁদা নিয়েছে। তার ইন্ধনে ওই ক্যাডার বাহিনী আমাদের উপর হামলা চালিয়ে আহত করে। সেই সাথে আমাদের কাছে থাকা নগদ টাকা ছিনতাই করে নেয়। এরইমধ্যে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত উপজেলার কোথায় কোন কাজ হবে না বলেও জানান তিনি।
এ ঘটনায় উপজেলা শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি মৌখিক ভাবে শুনেছি বিদ্যালয়ের ঠিকাদার এবং শ্রমিকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে উপজেলা প্রকৌশলী খলিলুর রহমান বলেন, সমসপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঠিকাদার সহ মিস্ত্রী এবং লেবারদের মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় কয়েক জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। ঠিকাদার সহ শ্রমিকদের উপর হামলার ঘটনায় তারা এরইমধ্যে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে ঠিকাদারদের কাজ শুরু করার জন্য।
এ ব্যাপারে অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা তাহেরপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই রাশেদ জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলেও অভিযুক্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে যারা এমন কাজ ঘটিয়ে তারা আগে থেকেই একটু অন্য রকম। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।