ঘূর্ণিঝড় রেমাল উপকূলের দুয়ারে কড়া নাড়ছে। উপকূলের মানুষের খাওয়া-ঘুম হারাম হয়ে গেছে। দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে অনেকে। রাত জেগে স্বেচ্ছাশ্রমে দুর্বল বেড়িবাঁধ সংস্কার করার চিত্র দেখা গেছে অনেক জায়গায়। রাতের পর সকাল থেকে ঝুকিপুর্ন বেড়িবাঁধ রক্ষায় অনেক এলাকায় কাজ করছে এলাকাবাসী। সাইক্লোন সেন্টারগুলোতে ইতোমধ্যে মানুষ আসা শুরু করেছে। রাতে হালকা বাতাস ও গুম গুম আওয়াজে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ভোরে বৃষ্টির দেখা মেলে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে দমকা হাওয়া আর জোয়ারের পানির তোড় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে স্থানীয়া। অনেক জায়গায় বেড়িবাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করার উপক্রম হয়ে পড়ে। দিনের বেলায় বাঁধ রক্ষা করতে পারলেও রাতের চিন্তায় আতঙ্কিত জনপদের মানুষ। ২৬ মে মোংলা ও পায়রা বন্দরে ১০ নং মহা বিপদ সংকেত ঘোষণার পরে কয়রা বিভিন্ন এলাকায় আতঙ্ক বাড়ে। সাথে সাথে এসব এলাকায় ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলায় মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে মাইকিং এর মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হয়। মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কয়রা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুুতি নেওয়া হয়েছে। রাতে উপকূল অতিক্রম করবে রেমাল সেই আতঙ্কে রয়েছে কয়রাবাসী। এদিকে কয়রার অধিকাংশ বেড়িবাঁধই দুর্বল। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, কয়রার ১২১ কিলোমিটারের মধ্যে মাত্র ১০ কিলোমিটার বেড়িবাধ ঝুঁকিপূর্ণ। বারবার বাঁধ ভাঙ্গায় উপকূলবাসী সংকেত পেলেই আতঙ্কে থাকেন।
কয়রা উপজেলার আংটিহারা, খাশিটানা, জোড়শিং, মাটিয়াভাঙ্গা, গাতির ঘেরি, গাববুনিয়া, কাটকাটা, রত্বার ঘেরি, মদিনাবাদ লঞ্চঘাট, লোকা, গোবিন্দপুরম ৪নং কয়রা, ৬নং কয়রা, মঠবাড়ি তেতুলতলার চর, নয়ানী ২নং কয়রা, হরিনখোলা সহ অনেক এলাকায় ভাঙ্গনের পাশাপাশি প্রবল জোয়ারের পানি উপচে পড়ার উপক্রম হয়ে পড়ে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে সেখানে জিও ব্যাগের ব্যবস্থা করা হয়। আর এলাকাবাসী জিও ব্যাগে মাটি ভরে রাস্তা সংস্কার করেন। যে কোন সময় দুর্বল বেড়িবাঁধ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে প্লাবিত হতে পারে বিস্তীর্ণ এলাকা। এমন আশঙ্কা নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে খুলনা জেলার কয়রার উপকূলের মানুষ। কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আছের আলী মোড়ল জানান, তার ইউনিয়নের খাশিটানা ও গোলখালীা এলাকার বেড়িবাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করে স্থানীয়দের চেষ্টায় কোন রকম রক্ষা পেলেও রাতে কি হবে তা বলা যাচ্ছে না। ঘড়িলাল থেকে চরামুখা খেয়াঘাট, পর্যন্ত বেশি ঝুঁর্কিপূর্ণ। উত্তর বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম কোম্পানি বলেন, ইউনিয়নের অধিকাংশ বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই খারাপ। কয়েকদিন আগে এলাকার একটি বেড়িবাঁধে ধস নামে। তারা খুবই আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিএম তারিক-উজ-জামান বলেন, ঘুর্নিঝড় রেমাল মোকাবেলায় কয়রায় ১১৬ টি সাইক্লোন সেল্টারে মানুয় আশ্রয় গ্রহন করছেন। ইতোমধ্যে সেখানকার মানুষের জন্য শুকনা খাবারের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। সেই সাথে সিপিপি সদস্যরা কাজ করছে। পাউবোর খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল আলম বলেন, কয়রার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের তালিকা করা হয়েছে। কিছু এলাকায় সংস্কারকাজও চলছে। পাউবো সব সময় নজর রেখেছে ঝুকিপুর্ন এলাকায় কাজ অব্যাহত রাখার। এ ছাড়া তাৎক্ষণিক কোন সমস্যা হলে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে জরুরী ভিত্তিতে বাঁধ রক্ষায় জিও ব্যাগের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। খুলানা-৬ পাইকগাছা-কয়রার সংসদ সদস্য মোঃ রশীদুজ্জামান বলেন, ঘুর্নিঝড় রেমাল মোকাবেলায় কয়রায় বিভিন্ন প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। আমি সার্বক্ষনিক কয়রায় অবস্থান করে সার্বিক বিষয় খোঁজ খবর রাখছি।