বগুড়ার গাবতলীতে বয়স্কভাতা ভোগী ০১ জন জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে ভাতা তালিকা থেকে বাদ দিয়ে অন্য আরেক জনকে ভাতা কার্ড করে দিয়েছেন গাবতলী উপজেলার বালিয়াদিঘী ইউনিয়ন পরিষদের ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার শ্যামলী। ভুক্তভোগী হলেন কলাকোপা উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত পিয়ার মোল্লার পুত্র ভুলু মোল্লা (১০২)।
অনুসন্ধানের জানা যায়, গাবতলী উপজেলার বালিয়াদিঘী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের কলাকোপা উত্তর পাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত পিয়ার মোল্লার পুত্র ভুলু মোল্লা ১ জুলাই ২০১১ সাল থেকে বয়স্ক ভাতা কার্ড করে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ভাতা পেয়েছেন। কিন্তু ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে ভাতার টাকা মোবাইল ফোন না আসলে ভুলু মোল্লার ছেলে গাবতলী উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে যান। সেখানে গিয়ে ভাতা না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে সমাজসেবা কার্যালয় থেকে বলা হয়, এ কার্ডের মালিক ভুলু মারা গেছেন, তিনি আর ভাতা পাবেন না। এ সময় ভুলু মোল্লার ছেলে সমাজসেবা অফিসার কে বলেন, এ কার্ডের মালিক স্বয়ং আমার বাবা ভুলু মোল্লা তিনি এখনো জীবিত। সেই জীবিত মানুষ কিভাবে মারা গেল। তখন অফিসার বলেন, এই বিষয়ে আপনি ইউনিয়ন পরিষদে যোগাযোগ করুন। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, বয়স্ক ভাতা নিবন্ধন, প্রতিবন্ধী ভাতা নিবন্ধন, গর্ভবতী ভাতা নিবন্ধন এইসবের কাজ হল ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তার। কিন্তু পরিষদের সচিব তার ব্যক্তিগত সুবিধা নেওয়ার জন্য সে নিজেই এসব কাজ করে থাকে।
ভাতা বঞ্চিত ভুলু মোল্লার ছেলে মুন্টু মোল্লা জানান, ১ জুলাই ২০১১ সাল থেকে আমার বাবা বয়স্ক ভাতা পেতো কিন্তু হঠাৎ করে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে ভাতার টাকা না আসলে আমি মহিলা মেম্বার শ্যামলীর সাথে কথা বললে সে বিষয়টি দেখবে আমাদের আশ্বস্ত করে। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পর সে এই ভাতার বিষয়ে কিছু না জানালে আমরা উপজেলা সমাজসেবা অফিস গিয়ে ভাতার আইডি দিয়ে চেক করে জানতে পারি আমাকক্ষকক্ষ র বাবা মৃত। সমাজ অফিসার কে জড়াজড়ি করলেন তিনি জানান এই বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের ভালো হবে খোঁজ নিয়ে বলে আমাদেরকে অফিস থেকে যেতে বলেন। এরপর আমি ইউনিয়ন পরিষদে এসে সচিবের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান এই বিষয়ে আমার আর কোন হাত নেই। আমি এই বিষয়ে গভীরভাবে খোঁজ নিয়ে দেখি আমার বাবাকে মৃত দেখিয়ে আমার পার্শ্ববর্তী চাচাতো ভাই আনসার কে ভাতা করে দিয়েছে। আমার সরকারি ভাতার কোন দরকার নেই আমি খাতা কলমে আমার বাবাকে জীবিত দেখতে চাই এবং মহিলা মেম্বার শ্যামলীর এমন ন্যক্কারজনক কর্মকা-ের বিচার চাই।
নাম প্রকাশ করার না শর্তে কলাকোপা উত্তরপাড়া বেশ কয়েকজন মুরুব্বি জানান, মহিলা মেম্বার শ্যামলী ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে জীবিত ভুলু মোল্লাকে মৃত দেখিয়ে আনসারকে বয়স্ক ভাতা কার্ড করিয়ে দিয়েছে মহিলা মেম্বার শ্যামলী।
এই বিষয়ে মহিলা মেম্বার শ্যামলীর সাথে কথা বললে সে জানায়, নতুন করে ভাতার কার্ড নিবন্ধিত শুরু হলে আমি লোক মারফত জানতে পারি ভুলু মোল্লা জীবিত নেই আমি বিষয়টি ক্রস চেক না করে তার নামে মৃত্যুর সনদ দেখাই এবং আনসারের নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড নিবন্ধন করে দেই। পরে যখন খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি ভুলু মোল্লা জীবিত তখন আমি আমার ব্যক্তিগত অর্থ থেকে তাদেরকে ভাতার টাকা দিতে থাকি এবং তাদের যে সমস্যা হয়েছে সেটা সমাধান করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকি।
জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে প্রত্যয়নপত্র দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বালিয়াদিঘী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুস আলী ফকির জানান, আমি ইউনিয়নের নানান কর্মকা- নিয়ে ব্যস্ত থাকি। ইউনিয়নের মেম্বার ও সচিব মিলে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, বয়স্ক ভাতা নিবন্ধন, গর্ভবতী হতে নিবন্ধনের কাজ করে থাকে তারা সব বিষয় কনফার্ম হওয়ার পর আমি এসব ফাইলে সই করি। কিন্তু মেম্বাররা যদি ব্যক্তিগত লাভের আশায় কোন ভুল করে থাকে সেটা আমার জানার বিষয় না এবং এটার কোন দায়িত্ব আমি নিব না।
গাবতলী উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা নাইম হোসেন বলেন, নির্দিষ্ট সময় পর পর সকল ভাতাভোগীদের হালনাগাদ তথ্য সকল ইউনিয়ন পরিষদে চাওয়া হয়। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা যাচাই-বাছাই করে মৃত্যুসনদ/প্রত্যয়নপত্রসহ মৃতদের বাদ দিয়ে নতুনদের তালিকা পাঠান। সে অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ নিই। অনেক সময় কিছু মেম্বার অবৈধ লেনদেন করে জীবিত মানুষকে মৃত দেখিয়ে বাদ দিয়ে অন্যকে তালিকাভুক্ত করেন। এখানে সমাজসেবা কার্যালয়ের কোনো দায় নেই। তবে মৃত সনদ দেখিয়ে ভাতা বাতিল করার পর কোনভাবেই ভাতা প্রদান সম্ভব নয়। আমরা বারবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলি।
গাবতলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান বন্যা বলেন, ঘটনাটি সত্য হলে সেটা বিশাল অন্যায় হয়েছে। বিষয়টি জরুরিভিত্তিতে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।