অন্তহীন সমস্যার নগরী হলো ঢাকা। রাজধানী ঢাকা ক্রমেই বসবাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। দেশের প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র হওয়ায় বাড়ছে ঢাকামুখী মানুষের স্রোত। সেই সঙ্গে কমছে স্বচ্ছন্দে ও সুস্থভাবে বেঁচে থাকার উপযোগী নাগরিক সুযোগ-সুবিধা। বায়ুদূষণের দিক থেকেও বিশ্বে ঢাকার অবস্থান কখনো প্রথম, কখনো দ্বিতীয়। এ নগরীতে সামাজিক অস্থিতিশীলতা ও অপরাধ দিন দিনই বাড়ছে। যানজটে নাকাল হতে হয় নগরবাসীকে। একটু বেশি বৃষ্টি হলেই নগরীর অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। সংস্কৃতিচর্চা ও বিনোদনের সুযোগ দিন দিন কমছে। ঢাকার পানি, বাতাস ও শব্দদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। পরিবেশের অস্বাভাবিক দূষণে বাড়ছে সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ। বর্তমানে ঢাকা দূষণের নগরীতে পরিণত হয়েছে এবং হারাচ্ছে বাসযোগ্যতা। শহরের রাস্তা দিয়ে চলাচল করার সময় ওপরে কনস্ট্রাকশনের কাজ নিচে ইলেকট্রিসিটির তার থেকে শুরু বিভিন্ন লাইনের তার। রাস্তার দুপাশে রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন মিল ফ্যাক্টরি, সেইসঙ্গে অকল্পিত অবকাঠামো ও গ্যাসলাইন। ফলে ঢাকা হয়ে উঠছে বসবাসের এক অযোগ্য শহর। বিশ্বের ‘বসবাসের অযোগ্য’ শহরগুলোর অন্যতম হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে ঢাকা। এমন পরিস্থিতিতে বসবাসযোগ্যতার দিক থেকে ঢাকার অবনমন ঘটাই স্বাভাবিক। বিশ্বে এমন নগরী খুঁজে পাওয়া ভার। কী করে একটি দেশের রাজধানী এত অপরিকল্পিত এবং অবাসযোগ্য হতে পারে, তা বিশ্বের কাছে বিস্ময় হয়ে রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কাছে এটি একটি বিস্ময়কর গবেষণার ক্ষেত্র। তাদের গবেষণারও অন্ত নেই। কিছুকাল পর পর গবেষণা করে অবাক হওয়ার মতো তথ্য আমাদের সামনে তুলে ধরছে। রাজধানীর দুয়েকটি এলাকার সৌন্দর্য বর্ধন করে একে বসবাস উপযোগী করা যাবে না। এটা শুধু অন্ধকারে একটু আলো হয়েই থাকবে, পুরো অন্ধকার দূর হবে না। প্রয়োজন এলাকাভিত্তিক উন্নয়ন। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে এলাকাভেদে ভাগে ভাগে উন্নয়নের উদ্যোগ নিলে কিছুটা হলেও একে উপযোগী করে তোলা সম্ভব। এজন্য সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদ্যোগ নিতে হবে। যথাযথ পরিকল্পনা করলে এবং এ অনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ নিলে, ছোট জায়গাও বাসযোগ্য করে তোলা যায়। সবার আগে প্রয়োজন অপরিকল্পিত যেসব কার্যকলাপ চলছে, তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। ঢাকা শহরকে সুন্দর শহরে পরিণত করার জন্য সবুজের কোনো বিকল্প নেই। প্রতিটি এলাকায় থাকতে হবে খেলার মাঠ, থাকতে হবে জলাশয়, থাকতে হবে পার্ক। নগরের প্রতিটি ভবন রাজউকের বিধিমালা মেনে তৈরি করতে হবে। শহরের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী পরিকল্পনা করা। বৃদ্ধির বিষয়টিও পরিকল্পিতভাবে হতে হবে। নাগরিকরা যেসব সমস্যা মোকাবেলা করছে, সেগুলো সমাধানে উদ্যোগী হতে হবে।