প্রতি বছরের ন্যায় এবার ও মুসলিমদের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। ত্যাগের মহিমায় এই উৎসব তথা কোরবানিকে ঘিরে চলছে নানা প্রস্তুতি। আগামী ১৭ জুন পছন্দের পশু কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করবেন মুসল্লিরা।তাই পশু কোরবানির জন্য প্রয়োজনীয় ছুরি ও চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার কামাররা। বর্তমানে প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় কালীগঞ্জে কমেছে কামারের দোকান। বাপণ্ডদাদার পুরানো এই ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন গুটি কয়েক কামার। সারা বছর অপেক্ষায় থাকা কামাররা যেন ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন এখন। খন্ডিত লোহা দিয়ে তৈরি করছেন তারা ছুরি,চাপাতিসহ বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম।
কালীগঞ্জের বিভিন্ন গ্রাম ও শহরে কামারের দোকানে কাজ করতে দেখা যায় পরেশ বাবুকে। তিনি বলেন, ঈদের এই কয়টা দিন কাজের প্রচন্ড চাপ থাকবে। সারা বছরের মধ্যে এমন চাপ আর কখনো হয় না।এ বছর ছুরি,চাপাতি এবং দাসহ লোহার বিভিন্ন যন্ত্রপাতির দাম অনেক বেশি থাকায় পুরাতন সরঞ্জাম দিয়েই পশু কোরবানি ও মাংস কাঁটার কাজ চালানোর কথা বলছেন ক্রেতারা। বর্তমানে দা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ১২০০ টাকায়, চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৮০০ টাকা, বটি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, আকার ভেদে ছুরি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে। কালীগঞ্জ শহরের কামার ও লোহা সামগ্রী ব্যবসায়ীরা বলেন,বিগত বছরের তুলনায় এবছর কাজের চাপ অনেকটাই বেশি।
দা,চাপাতি ও ছুরির চাহিদা বেশি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু লোহার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন সামগ্রী কেনায় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অনেক ক্রেতা।দলিল উদ্দিন নামের এক ক্রেতা বলেন,আগের বছরের চাপাতি ও ছুড়ি মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।পুরাতন এই সামগ্রী দিয়েই এবারে পশু কোরবানি ও মাংস কাটাকাটির কাজ চালাতে হবে। দাম বেশি হবার কারণে নতুন সরঞ্জাম কিনা সম্ভব হচ্ছে না।কামার শিল্পের প্রতি সরকারের বিশেষ নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কামাররা। তারা জানান, সরকারি সহায়তা ও আর্থিক অনুদানে উপকৃত হবেন তারা।
কালীগঞ্জ উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় প্রায় অর্ধশত কর্মকার সরাসরি এ পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। তাদের নিখুঁত কাজের সুনামের এলাকার লোকজনও ছুটে আসেন। কেননা তাদের পেশাগত আচরণও মুগ্ধ করে সবাইকে। শত পরিশ্রমের মাঝেও হাসি মুখে কথা বলে ক্রেতাদের মন জয় করার কারণে অনেকেই খুশি মনে তাদের কিছু বাড়তি টাকা দিতেও দ্বিধাবোধ করেন না। এমনিতে সারা বছর কাজকর্ম অনেক কম থাকে। এর মধ্যে কয়েকদিন পর পর লোহার দাম বেড়ে যায়। এতে তারা সমস্যায় পড়েন। ভালো চালান থাকলে আগে থেকে লোহা কিনে রাখতে পারলে ভালো লাভ পাওয়া যেতো বলে জানান তারা। তাছাড়া পশু জবাই থেকে শুরু করে মাংস তৈরির কাজে প্রয়োজনীয় ওইসব হাতিয়ারের চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। তাই ঈদের পূর্বেই কোরবানির পশু জবাই কাজের হাতিয়ার সংগ্রহে কামারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেন স্থানীয় কসাই, কৃষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ।