বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের পতন থামছেই না। কেবল ডলারের কারণেই নড়বড়ে অর্থনীতির অনেক সূচক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ পদক্ষেপ বাড়িয়ে দিয়েছে ঋণের সুদ। এসব পদক্ষেপে বেড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যে খরচ। ব্যাংক খাতের পরিস্থিতিও নাজুক। এমন এক পরিস্থিতিতে আসছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট। তবে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগামী বাজেটে সরকারের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০ সালের এপ্রিলে ব্যাংকঋণের সর্বোচ্চ সুদ ৯ শতাংশে নির্ধারণ করে দিয়েছিল। তবে অর্থনীতিতে সংকট শুরু হলে গত বছরের জুন থেকে ব্যাংকঋণের সুদহার নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি স্মার্ট চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরকারের ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের গড় সুদহারের ভিত্তিতে ব্যাংকের এ সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে। প্রতি মাসের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংক স্মার্ট সুদহার প্রকাশ করে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বহুল আলোচিত-সমালোচিত ‘৯-৬ সুদহার’ উঠিয়ে নেওয়ার পর ঋণের সুদহার বেড়ে এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। ব্যাংকের ঋণের ওপর সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯ শতাংশ, আর আমানতের ওপর সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ৬ শতাংশ। ঋণের সুদহার বাড়ার পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এখন আমানতের ওপর সুদের হারও বেড়েছে। সুদহার বাড়ায় তারল্যসংকট আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যাংকাররা। কারণ, ঋণের কিস্তি পরিশোধের ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেক ঋণগ্রহীতার কিস্তি অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে। ব্যাংকাররাও বলছেন, সুদহার সহনীয় থাকলে ব্যবসায়ীদের জন্য ভালো হয়। কারণ, সুদহার বেড়ে গেলে গ্রাহকের কিস্তির পরিমাণ বেড়ে যায়। অনেক গ্রাহক ঋণ পরিশোধে বিলম্ব করেন। এমনিতে ঋণ আদায় কমে গেছে। এখন সুদহারের কারণে তা আরও কমতে পারে। অন্যদিকে, শিল্প উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা একপ্রকার কঠিন সময় পার করছেন। অনেকেই লোকসানের ধকল কাটাতে না পেরে ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছেন। ব্যাংক ঋণের সুদহার যেন না বাড়ে, সেদিকে নজর দিতে হবে। সুদের হার বাড়লে দেশে শিল্পায়ন ও বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। ডলারের দাম নিয়ে ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তা এখনো কাটেনি। ডলারের নির্ধারিত দাম ১১৭ টাকা যেন সব ব্যাংক মেনে চলে, সেটি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তদারক করতে হবে। এ ছাড়া নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত গ্যাস-বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহে বাজেটে নির্দেশনা বা পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন। মূল্যস্ফীতি যাতে নতুন করে না বাড়ে, সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশকে আরও জোরদার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ অর্থনীতি সঠিক গতিতে চললেই সরকার তার কাক্সিক্ষত রাজস্ব আহরণ করতে পারবে।