বাংলাদেশ মূল্যস্ফীতির চক্রে পড়েছে দুই বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। ২০২২-এর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে পণ্য চলাচল শৃঙ্খল যখন ভেঙে পড়ে, তখনই মূল্যস্ফীতির তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এবং ভোগ্য পণ্য ছাড়াও আমাদের শিল্পপণ্যের উপকরণ, যন্ত্রপাতি, কৃষির উৎপাদন উপকরণ, মৎস্য, পোলট্রি-গবাদি পশুর খাদ্য, ওষুধ, সার, জ্বালানি-সব কিছুর দাম অত্যধিক বেড়ে যায়। সেই থেকেই খাদ্যপণ্যের দাম হুট করেই বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে কোনো কোনো পণ্য পাঁচ-সাত গুণ বাড়ার ঘটনাও ঘটেছে। ভোক্তাদের জন্য বাজারে কোনো সুখবর নেই বললেই চলে। কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, ডিম, সবজির বাড়তি দরের সঙ্গে গত সপ্তাহের শেষে এসে যুক্ত হয়েছে সয়াবিন তেল। এতগুলো পণ্যের দাম একসঙ্গে বাড়ায় সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষ। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গত কয়েক দিনে টানা বৃষ্টির কারণে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কাঁচা মরিচ ও সবজির দাম বেড়েছে। এছাড়া, চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচের আমদানিও কম হচ্ছে। সবমিলিয়ে দাম বেড়েছে। তবে বছরের শুরু থেকেই দফায় দফায় নিত্যপন্যেন দাম বাড়লেও সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ার জন্য সাম্প্রতিক ভারী বৃষ্টি ও মৌসুমি বন্যার দোহাই দিচ্ছেন। কিন্তু বন্যা তো সারা দেশে হয়নি। সিলেট অঞ্চলের বন্যার কারণে সারা দেশে সবজির দাম এতটা বেড়ে যাওয়ার যুক্তিসংগত কারণ নেই। এর পেছনে মহলবিশেষের কারসাজি আছে। প্রতিবারই তারা তক্কে তক্কে থাকে, কীভাবে দাম বাড়িয়ে ক্রেতা তথা ভোক্তাদের পকেট কাটা যায়। কিন্তু ঈদের সময় সরকারের মন্ত্রী-আমলারা কিছুটা নড়েচড়ে বসেছিলেন। বিভিন্ন বাজারে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের কিছু তৎপরতাও দেখা গিয়েছিল। ঈদের পর সবাই নীরবতা পালনকেই শ্রেয় মনে করেছেন। এই সুযোগে স্বার্থান্বেষী মহল তথা সিন্ডিকেট ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে চলেছে প্রায় প্রতিটি ভোগ্যপণ্যের। সরকারের নীতিনির্ধারকদের অজানা নয় যে নিত্যপণ্যের ক্রমাগত দাম বেড়ে যাওয়ায় দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষেরা খুবই কষ্টে আছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের উচিত বাজার তদারকির পাশাপাশি টিসিবির মাধ্যমে কম দামে চাল-ডাল-ভোজ্যতেলের মতো পণ্যগুলোর সরবরাহ বাড়ানো। এতে হতদরিদ্র মানুষগুলোর জীবনযাপনের কষ্ট কিছুটা হলেও কমবে। কারা বাজার অস্থিতিশীলতার পেছনে দায়ী তাদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবে এর জন্য প্রয়োজন সমন্বয়। সমন্বয় করতে না পারলে অদৃশ্য এ শক্তির হাতে দেশের মানুষকে প্রতিনিয়ত ভুগতে হবে। কখনো পেঁয়াজ, কখনো কাঁচামরিচ, কখনো চিনি, পোলট্রি, তেল বা অন্য কোনো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে নতুন ভোগান্তি আমাদের সামনে হাজির হবে।