ঝালকাঠির সদর উপজেলার নথুল্লাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম এবং ১০ম শ্রেনীর ৭ ছাত্রীকে বেধরক পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিদ্যালয়ের একটি শ্রেনীকক্ষে ছাত্রীদের পেটানোর এ ঘটনা ঘটেছে। আহত শিক্ষার্থীদেরকে তাদের সহপাঠি,অবিভাবক ও স্থানীয়রা উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। আহত শিক্ষার্থীরা হল, অষ্টম শ্রেনীর ছাত্রী মেসাম্মৎ জান্নাতী, ইসরাত জাহান রূমকী, নবম শ্রেনীর জান্নাতী আক্তার, দশম শ্রেনীর ছাত্রী সিপু আক্তার, আয়শা মনি, সুমা বেগম। এরা বর্তমানে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। অন্য এক শিক্ষার্থী একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় জনতা উত্তেজিত হয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জেল হোসেনকে তার কক্ষে অবরুদ্ধ করে গণপিটুনি দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ এবং ম্যাজিষ্ট্রেট গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। আহত অবস্থায় ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। আহত শিক্ষার্থী ও তাদের অবিভাবক এবং স্থানীয়রা জানায়, আগামী ২৮ জানুয়ারী বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া ও সংস্কৃকিত অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। সে জন্য ক্লাস শেষে কয়েকজন ছাত্রী দলীয় নৃত্যে অংশ নেয়ার উদ্দেশ্যে মোবাইল ফোনে গান বাজিয়ে নাচ শিখছিল অন্যরা সেটি দেখতেছিল। বিষয়টি প্রধান শিক্ষকের নজরে এলে নিষেধ থাকা সত্বেও বিদ্যালয়ে মোবাইল ফোন আনায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রীদেরকে বেত দিয়ে বেধরক পেটায়। এতে ৭ শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে স্থানীয়রা উত্তেজিত হয়ে প্রধান শিক্ষককে আটকিয়ে গণপিটুনি দেয়। এসময় ঐ বিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ অন্য শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকে হেনস্থা করে স্কুলের লাইব্রেরী কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখে। বিগত ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামীলীগের টানা ১৫ বছর একই বিদ্যালয়ে কর্মরত নানা দুর্নীতিতে লিপ্ত প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জেল হোসেনকে অবরুদ্ধ করার খবরে স্কুল কম্পাউন্ডে ছুটে আশপাশের স্থানীয় জনতা এবং ছাত্র/ছাত্রীদের অভিভাবকরা। তারা সকলে।সেখানে জড়ো হয়ে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ ও বিচারের দাবিতে শ্লোগান ও বিক্ষোভ করতে থাকে। এঅবস্থায় ঝালকাঠি সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলাম সহ সদর থানা পুলিশের একটি দল বিদ্যালয়ের লাইব্রেরী কক্ষ থেকে প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলে প্রধান শিক্ষককে বহনকারী গাড়ি বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়রা। পরিস্থিতি সামাল দিতে ম্যাজিষ্ট্রেটের গাড়ির মধ্যে বসেই পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করেন প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জেল হোসেন। এর পরেই সড়ক ছেড়ে দেয় আন্দোলনরতরা। এদিকে প্রধান শিক্ষকের পিটুনিতে আহত ১৫ শিক্ষার্থী ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। তাদের মধ্যে চারজনকে ভর্তি রেখে বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে আহত প্রধান শিক্ষককে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। নথুল্লাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সাবেক সেনা সদস্য মো. সাব্বির হোসেন জানান, বিদ্যালয়টির ম্যনেজিং কমিটি গঠন নিয়ে বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই গ্রুপিং চলছিলো। প্রধান শিক্ষক একটি গ্রুপের মদদদাতা ছিলেন। তিনি মিজানুর রহমান বাদল নামের একজনকে এডহক কমিটির আহবায়ক করে একটি কমিটি গোপনে দাখিল করেছে। এটা জানাজানি হলে অভিভাবকরা ডিসির কাছে লিখিত আপত্তি দেয়। যা প্রধান শিক্ষক বৃহস্পতিবার সকালে জানতে পেরেছে। আর সেই থেকেই তার মাথা গরম হয়। সেই রাগ ঝেড়েছে ছাত্রীদের পিটিয়ে। প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জেল হোসেন কর্তৃক দাখিলকৃত এডহক কমিটির বিপক্ষে শিক্ষার্থী/অভিভাবক ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের পক্ষে মো. হাফিজুর রহমান লিটু লস্কর স্বাক্ষরিত ঐ আপত্তি আপত্তিপত্রের একটি কপি সংগ্রহ করেছে। তাতে লেখা রয়েছে, "প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জেল হোসেন স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের মতামত উপেক্ষা করে নিজের ইচ্ছামত শিক্ষক নিয়োগ, অতিরিক্ত ফি আদায়, জন্ম নিবন্ধনের সংশোধনের কথা বলে টাকা আদায়, ফেল করা ছাত্রদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি নিয়ে পরিক্ষায় অংশ গ্রহন করার সুযোগ দেয়া, বহু লোকের নিকট হইতে নিজ নামিয় চেক প্রদান করে ধার হিসেবে টাকা এনে টাকা পরিশোধ না করে স্কুলের স্বার্থে খরচ করেছে বলে ধারের টাকা পরিশোধ না করে মানুষের সাথে প্রতারনা করা, স্কুলের গাছ বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ সহ বিভিন্ন প্রকার দূর্নীতি করে আসছে।" আরে উল্লেখ রয়েছে, "প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতারনা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতে নথুল্লাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির বিষয়ে জরুরী বৈঠক হয়। বৈঠকে ছাত্র/ অভিভাবক ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের মতামতের ভিত্তিতে এ্যাড. আল আমিন (এ.পি.পি) কে সভাপতি মনোনিত করে এবং হাফিজুর রহমান লিটু লস্করকে অভিভাবক সদস্য হিসেবে মনোনিত করে সিদ্ধান্ত গৃহীতি হয়। ঐ সিদ্ধান্তে প্রধান শিক্ষক একমত পোষন করে স্বাক্ষর প্রদান করেন এবং উপস্থিত অভিভাবকগণও স্বাক্ষর প্রদান করেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ, শিক্ষার্থী, অভিভাবকগনের মতামত উপেক্ষা করর, অবৈধভাবে আওয়ামীলীগ সমর্থীত মো. মিজানুর রহমান (বাদল) কে এডহক কমিটির আহবায়ক মনোনিত করে একটি পকেট কমিটি দাখিল করেছেন।" তার দেয়া ঐ কমিটি যাতে অনুমোদন না পায় তার প্রেক্ষিতে এলাকাবাসী ও অভিভাবকগন এবং স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে এই আপত্তিপত্র দাখিল করা হয়। হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. সুলতানা সোনিয়া জানান, ছয় ছাত্রীকে হাসপাতালে অনা হয়, তাদের অবস্থার খুব একটা গুরুতর না হওয়ায় প্রথমিক চিকিৎসা দিয়ে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।