সুন্দরবন: জলবায়ু পরিবর্তন ও মনুষ্যসৃষ্ট হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই

সম্পাদকীয় : | প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৮:১৫ পিএম
সুন্দরবন: জলবায়ু পরিবর্তন ও মনুষ্যসৃষ্ট হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই

সুন্দরবন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন, যা বাংলাদেশের জন্য শুধু পরিবেশগত নয়, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। তবে জলবায়ু পরিবর্তন ও মনুষ্যসৃষ্ট হস্তক্ষেপের কারণে এই বন আজ চরম ঝুঁকির মুখে। গবেষকদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, যা সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থানের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। অন্যদিকে, বাণিজ্যিক পর্যটন, বিষ দিয়ে মাছ ধরা, প্লাস্টিক দূষণ ও বন্যপ্রাণী শিকার আরও বড় হুমকি তৈরি করছে। সুন্দরবন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ‘ইকো ট্যুরিজম’ শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও বাস্তবে এটি নিয়ন্ত্রিত না হলে তা বনের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। বর্তমানে বনের কাছাকাছি অসংখ্য রিসোর্ট তৈরি করা হয়েছে, যেখানে উচ্চশব্দে গানবাজনা ও আলোক দূষণ বন্যপ্রাণীর স্বাভাবিক জীবনচক্র ব্যাহত করছে। পর্যটকদের অনিয়ন্ত্রিত চলাচল এবং তাদের ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বর্জ্য জলজ প্রাণীর অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষকদের মতে, এই দূষণের ফলে সুন্দরবনের ফুড চেইন নষ্ট হতে পারে, যা পুরো বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য নষ্ট করবে। বন সংরক্ষণে সরকারের নেওয়া কিছু ইতিবাচক উদ্যোগ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সংরক্ষিত এলাকার পরিমাণ ২৩ শতাংশ থেকে ৫৩ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে এবং ডলফিন অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এগুলো যথেষ্ট নয়। গবেষকরা মনে করেন, শুধু সংরক্ষিত এলাকা বৃদ্ধি নয়, বরং কার্যকর ও আধুনিক বন সংরক্ষণ নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন এবং মনুষ্যসৃষ্ট ঝুঁকি বিবেচনায় নেওয়া হবে। সুন্দরবনের সংরক্ষণে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বাণিজ্যিক পর্যটন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং রিসোর্ট নির্মাণে কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত। বনজসম্পদ আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং বিষ দিয়ে মাছ ধরা ও বন্যপ্রাণী শিকারের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি, স্থানীয় জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, যেন তারা বন সংরক্ষণে অংশগ্রহণ করতে পারে। বাংলাদেশের অর্থনীতি বহুমুখী, যেখানে সুন্দরবনের পর্যটন থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব খুবই নগণ্য। সামান্য আর্থিক লাভের জন্য যদি বন ধ্বংস হয়, তবে তা দীর্ঘমেয়াদে দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হবে। তাই, বনকে অর্থনৈতিক উৎস হিসেবে নয়, বরং পরিবেশগত ও জীববৈচিত্র্যের রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। সুন্দরবন রক্ষায় সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ ও জীবন্ত সুন্দরবন নিশ্চিত করতে হলে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে