ঢাকার বাড্ডা থানার ব্র্যাক ইউনিভারসিটির সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশে গুলিতে গুরুতর আহত মো.হাসান সরদার (২১) কাজ করার ক্ষমতা হারিয়েছেন। বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়ায় এই যুবক বয়ে বেড়াচ্ছেন শরিরে অসংখ্য স্প্রিন্টার নিয়ে ও ক্ষতের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ২১ বছররে এই যুবক। ডাক্তার বলেছে বাংলাদেশে তার আর চিকিৎসা সম্ভব না। টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। শরিরে অসংখ্য বুলেট যন্ত্রণায় রাতে ঘুমাতে পাছেনা। ঘরে নেই খাবা। দুই ভাই-বোন কলেজে লেখাপড়া করছে, তাদের কলেজের বেতন দিতে না পারায় লেখাপড়া বন্ধের পথে। হাসান সরদারের পিতা নেই। পরিবারে একমাত্র উপার্যনক্ষম ছিলেন এই হাসান সরদার। আহত হবার পরে তখন তাকে দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে ছুটে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক সারজিস আলম। অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে সাক্ষাৎ হয় অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর সাথে। তার পরেও হাসানের উন্নত চিকিৎসা হচ্ছেনা। পঙ্গু হাসপাতে দীর্ঘদিন চিকিৎসা ও সাভারে সিআরপিতে থেরাপি নেওয়ার পরে এখন সে গ্রামের বাড়িতে। ঔষধ নেই, ঘরে খাবার নেই অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটছে তার ও তার পরিবারে।
আহত মো.হাসান সরদার বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের পতিহার গ্রামের মৃত মানিক সরদারের ছেলে। মো.হাসান সরদার তিন ভাই-বোন। দুই ভাই আর এক বোনের মধ্যে সে সবার বড়।
তার পরিবার ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, মো.হাসান সরদার ঢাকায় ইলেকট্রনিক্স মিস্ত্রী’র কাজ করতো। পিতার মৃতুর পরে অভাবের তাড়নায় পড়াসুনা ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে ইলেকট্রনিক্স মিস্ত্রীর কাজ করে পরিবার ও ভাই- বোনের লেখা পড়ার খরচ চালাতো।
জুলাইতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু হলে মো.হাসান সরদার ওই আন্দোলনে যোগ দেয় । ১৮ জুলাই ঢাকার রামপুরা ব্রিজে বসে পুলিশের গুলি পায়ে লেগে আহত হয়। ঢাকার রামপুরা ব্রিজে এলাকায় মো.হাসান সরদার সহ তার সঙ্গে থাকা বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীকে লক্ষ্য গুলি করে পুলিশ। সঙ্গে থাকা অনেকে ঘটনাস্থলেই মারা গেলেও কোনো মতে বেঁচে যান মো.হাসান সরদার। ছাত্রদের সহযোগিতায় পরে এক ভ্যানচালক তাকে এক বাসায় নিয়ে যায়। ফ্লোরে শুয়ে কাতরাচ্ছিলেন। জনৈক এক চিকিৎসক ঘটনা শুনে তাকে ওই বাসায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেন।
পায়ে গুলি আহতাবস্থায় ৫ আগস্ট আবার আন্দোলনে গিয়ে বাড্ডা ব্র্যাক ইউনির্ভাসিটি সামনে পুলিশের ছোড়া গুলি তার ডান হাতে ও পাজরে কয়েক শত গুলি লাগে। এতে সে রকাক্ত জখম হয়। তাকে প্রথমে আবতাফনগর নাগরিক হাসপাতালে নেয়া হলে, তার অবস্থা গুরুতর হওয়াতে তাকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তিকরা হয়। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরে একটু সুস্থ্যহলে চিকিৎসকেরা বলেছে তার শরিরে যে স্প্রিন্টার রয়েছে তা অপারেশন করে বের করতে হবে। তার হাতে ও শরিরে প্রায় ৪শত স্প্রিন্টার রয়েছে। এতো স্প্রিন্টার শরির থেকে অপারেশন করে বাংলাদেশে বের করা সম্ভব না। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে হবে। তিনি এখন বর্তমানে গ্রামের বাড়ি আছেন। দরিদ্র পরিবারে সন্তান মো.হাসান সরদার। তার পিতা নেই, মা গৃহীনি, ছোট ভাই-বোন কলেজে লেখাপড়া করেছে। তার পরিবারে পক্ষে তার চিকিৎসা করানো সম্ভব না। সে চিকিৎসার আভাবে বাড়িতে স্প্রিন্টারের যন্ত্রনাবয়ে বেড়াচ্ছে। শরিরে থাকা স্প্রিন্টারের যন্ত্রনায় রাতে ঘুমাতে পারছে না।
মো.হাসান সরদার পরিবার প্রায় এক লাখ পঞ্চাস হাজার টাকা ধারদেনা করে প্রাথমিক চিকিৎসা করালেও অর্থাভাবে হাসপাতাল থেকে চলে আসতে হয়। বাহির থেকে ক্ষত শুকালেও বুকের ও ডান হাতে প্রায় চারশত স্প্রিন্টার ভেতর অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে দিনাতিপাত করছে সে। প্রতি মাসে অনেক টাকার ঔষধ লাগে তার। এ পর্যন্ত কেউই নেয়নি তার খবর। পরিবারেনেই কোন খাবার।
সরকারি সহযোগীতায় তার পূর্ণচিকিৎসা সহ আর্থিক সহায়তার আবেদন করেছে গ্রামবাসী। টাকার অভাবে ভাই-বোনকে কলেজের বেতন দিতে পাছে না। চিকিৎসক জানিয়েছে অপারেশন করতে হবে তা বাংলাদেশে সম্ভবনা। টাকার অভাবে অপারেশনও করতে পারছেন না গুলিবিদ্ধ যুবক।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন গুলিতে গুরুতর আহত মো.হাসান সরদার শনিবার কথা বলে সে জানায় , ঢাকার রামপুরা ব্রিজের সামনে ছাত্র আন্দোলনের সময় ১৮ জুলাই পুলিশের গুলি পায়েলেগে আহত হই। হাসপাতালে চিকিৎসা করতেও ভয় পেয়েছি। পুলিশ আবার ধরে নিয়ে যায় কিনা আতঙ্কে ছিলাম। একটি বাসায় বসে আমি সহ আরো কয়েকজনে এক চিকিৎসরেদারা চিকিৎসানেই। একটু সুস্থ্যহয়ে আবার ৫ আগস্ট আবার আন্দোলনে যাই। ওইদিন আন্দোলনেগিয়ে বাড্ডা ব্র্যাক ইউনির্ভাসিটি সামনে পুলিশের ছোড়া গুলি আমার ডান হাতে ও পাজরে এবং মুখমন্ডলে কয়েক শত গুলি লাগে। এতে আমি তখন রকাক্ত জখম হই। স্থারনীয়রা প্রথমে আমাকে আবতাফনগর নাগরিক হাসপাতালে নেয়। আমি তখন অজ্ঞান ছিলাম। সকলে মনে করছে আমি মারা গিয়েছি। ওই দিন আমাকে নাগরিক হাসপাতালের ফ্লোরে ফেলে রাখা হয়া। তার পরে আমাকে মুগদা মেডিকেলে নিয়ে যওয়া হয়। পরদি ৬ আগস্ট আমার জ্ঞান ফিরে আসলে ওইদিন আমাকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তিকরা হয়। ওই রাতে আমাকে অপারেশন করার কথাবলে আমাকে অপারেশন রুমে নিয়েযায়। আমাকে অপারেশন না করে আমাকে অপারেশন রুম থেকে বের করে নিয়ে আসে। ৭ আগস্ট সকালে আমাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে পাঠিয়েদেয়। কুর্মিটোলা হাসপাতাল আমাকে ভর্তিনা করে আবার পূর্ণরায় পঙ্গু হাসপাতালে পাঠিয়েদেয়। ৭ আগস্ট রাতে পূর্ণরায় পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হই। মাঝে আমাকে সাভার সিআরপিতে পাঠায় থ্যারাপি দেবার জন্য। সেখানে থ্যারাপি শেষে আবার পঙ্গু হাসপাতালে চলে আসি। পঙ্গু হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরে একটু সুস্থ্যহই। এরপেরে চিকিৎসকেরা আমার বলেছে শরিরে যে গুলি রয়েছে তা বাংলাদেশে অপারেশন করে বের করা সম্ভব হবে না। আমার হাতে ও শরিরে প্রায় ৪শত গুলি রয়েছে। এখন আমাকে বিদেশে চিকিৎসা করা ছাড়ার আর উপায় নাই। আমা ঋণ ওধার দেনা করে চিকিৎসা করিয়েছে। বাড়িতে আসার পর কেউ কোনো খবর নেয় নাই। টাকার অভাবে আমার ভাই-বোনের কলেজের ফি-দিতে পারছি না। আমার ঘরে খাবার নাই। সরকারে কাছে আমার দাবি। আমাকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আমাকে স্স্থ্যুকরা ও সহযোগিতা কামনা করছি। আমাকে এযাবত জুলাই স্মৃতি ফাইন্ডেশন থেকে এক লাখ টাকা দিয়েছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত সরকারি কোন সহযোগিতা পাই নাই।
আহত মো.হাসান সরদারের বোন সোহেলি আক্তার বলেন, আমার পিতা নাই। আমার বড় ভাই আমাদের লেখা-পাড়া সহ পরিবারে ভরন পোসনের দায়িত্বে ছিলো। এখন আমার ভাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন গুলিতে গুরুতর আহত সে কোন কাজ করতে পারেছেনা। আমরা এখন বহু কষ্টে জীবন জাপন করছি। আমার ও ছোট ভাই সোহান সরদার এইচএসসিতে কলেজে লেখা-পড়া করছি। আমাদের কলেজের বেতন দিতে পারছিনা। আমাদের দুই ভাই-বোনের লেখা পড়া বন্ধের পথে। আমার ভাই দেশের জন্য পঙ্গু হলো দেশ অমাদেরে কি দিলো? আমি সরকারে কাছে দাবি করছি, আমার ভাইকে বিদেশ নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করিয়ে তাকে সুস্থ করানো। আমার ভাই যাতে সাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে এবং সে কাজকরে আমাদের পরিবার দায়িত্বভার চালাতে পারে।
আহত মো.হাসান সরদারের মা নূরজাহান বেগম বলেন, আমার দুই ছেলে এক মেয়ে। হাসান সরদার আমার বড় ছেলে। আমার স্বামী মারা যাবার পরে। হাসান সরদার কাজ করে আমার পরিবারে চালাতো। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে গিয়ে আমার ছেলে হাসান গুলিতে আহত হবা পরে আমাদের পরিবারে নেমে আসে অন্ধকার। তাকে চিকিৎসা কারাতে গ্রাম থেকে ধার দেরা করে দিয়েছি। এখন প্রতিদিন সকাল হলে পাওনাদারেরা টাকার জন্য আসে। একদিকে ঘরে কোন খাবার নাই, ছেলে ঔষধ নাই। অন্যদিরে দেনাদারদের টাকার চাপ। ডাক্তার বলেছে হাসান কে একটু ভালো খাবার খাওয়াতে, তাকে ভালো খাবারতো খাওয়াতে পারিনা, এমনকি একটি ডিম খাওয়াবো তাও পারিনা। আমি সরকারে কাছে দাবি করি আমার ছেলেটাকে ভালো চিকিৎসা করিয়ে তাকে সুস্থ্যকরুক। তার শরিরে কি যে যন্ত্রা আমি বুঝি। সে রাতে চিৎকারকরে ঘুমাতে পারে না। তার চিৎকারে আমারও ঘুমাতে পারিনা। তার মাথারকাছে বসে সুদু চোখের পানি ফেলি। আমি মা হয়ে চোখের পানি ফেলা ছাড়া আমার আর কিছু করার নাই।
গ্রামে প্রতিবেসি মো.সাইদুর রহমান টিটু, জাহাঙ্গীর সরদার ও আলেয়া বেগম বলেন, হাসান ঢাকায় ইলেকট্রনিকের কাজ করত। ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। তার কিছু টাকা পয়সা ছিল তাও শেষ। কাজ কর্ম করতে পারছে না। অন্যের সহযোগিতা নিয়ে চলতে হচ্ছে। সরকারি কোনো সহযোগিতা পায়নি। বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারিহা তানজিন বলেন, আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের পতিহার গ্রামের মৃত মানিক সরদারের ছেলে মো. হাসান সরদার জুলাই গণঅদ্ভূত্থানে গ্রুতর আহত হয়েছিলেন। তিনি আমাদের সরকারি তালিকা একজন তারিকা ভুক্ত আহত ব্যাক্তি। তাকে ইতোমধ্যে জুলাই ফাইন্ডেশন থেকে এক লাক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। তিনি গ্রুতর আহত এবং আহতর স্থান গ্রুরতর হওয়াতে। আমরা উপজেলা পর্যায় থেকে জুলাই ফাইন্ডেসনের সাথে যোগাযোগ করেছি। তারা জানিয়ছে আগামি মাস থেকে আহদের সহযোগিতা করা হবে। এছাড়া তার চিাকৎসা দেশের যে কোন সরকারি হাসপাতালে নিতে পাবেন এবং সম্মিরিত সামরিক হাসপাতালে বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন।