দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষা বাহিনীর ৫৫তম বৈঠকে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা সন্তোষজনক হলেও বিতর্কিত ইস্যুগুলোর কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি। চার দিনব্যাপী এই বৈঠকে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) এবং ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) উভয় পক্ষই সীমান্ত সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছে। তবে সীমান্তে কাঁটাতার নির্মাণ, অনুপ্রবেশ, পাচার এবং সশস্ত্র দুষ্কৃতিদের কার্যক্রমসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। জার্মান সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন বিজিবির ডিরেক্টর জেনারেল মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকি। ভারতের পক্ষে অংশ নেন বিএসএফের ডিরেক্টর জেনারেল দলজিৎ সিং চৌধুরী। বৈঠক শেষে দুই পক্ষই জানান, আলোচনায় উভয় দেশের উদ্বেগ ও প্রস্তাবনা উত্থাপিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও আলোচনার পথ খোলা রাখা হয়েছে।
বৈঠকে ভারত বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ, অস্ত্র পাচার এবং অন্যান্য অবৈধ কার্যক্রমের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। পাশাপাশি, ভারতের অভিযোগ, বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা থেকে ভারতের অভ্যন্তরে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে বিজিবিকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতের কাঁটাতার নির্মাণের বিষয়টি আলোচনায় তুলে ধরে। বাংলাদেশের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার থেকে ১৫০ গজের মধ্যে কাঁটাতার নির্মাণ আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইনের লঙ্ঘন। সম্প্রতি মালদার কাছে সবদলপুর গ্রামে কাঁটাতার নির্মাণকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডা হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ এ বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে এবং যৌথ আলোচনা ছাড়া এমন নির্মাণকাজ না করার দাবি জানায়।
বিজিবির ডিজি মেজর জেনারেল সিদ্দিকি জানান, আন্তর্জাতিক সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো নির্মাণকাজ করতে হলে উভয় দেশের আলোচনা ও সম্মতি প্রয়োজন। এ ধরনের নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা ও যৌক্তিকতা উভয় পক্ষকে বুঝতে হবে।
ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, সীমান্ত সুরক্ষার জন্য সিঙ্গেল লাইন ফেন্স বা আধুনিক কাঁটাতার নির্মাণ অপরিহার্য। এছাড়া, সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারে যৌথ বর্ডার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান প্রণয়নের প্রস্তাব দেওয়া হয়। ভারত আরও অভিযোগ করে, বিএসএফ এবং ভারতীয় নাগরিকদের ওপর বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা থেকে হামলা চালানো হচ্ছে।
বৈঠকে বিজিবি আগরতলা সীমান্তে খালে জল পরিশোধন প্লান্ট নির্মাণের প্রস্তাব দেয়। এছাড়া, সীমান্তবর্তী নদীর জলবণ্টন এবং সশস্ত্র দুষ্কৃতিদের কার্যক্রম নিয়েও আলোচনা হয়।
চার দিনের বৈঠক শেষে দুই পক্ষের ডিরেক্টর জেনারেল যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেখানে তারা জানান, আলোচনায় উত্থাপিত বিষয়গুলো নিয়ে সহমতের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কিত ইস্যুগুলোর কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি। উভয় পক্ষই ভবিষ্যতে আরও আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
এই বৈঠকে সীমান্ত নিরাপত্তা ও সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোতে উভয় দেশের উদ্বেগ ও প্রস্তাবনা উত্থাপিত হলেও, বিতর্কিত বিষয়গুলোর সমাধান এখনও অনিশ্চিত। দুই দেশের মধ্যে আস্থা ও সহযোগিতা বাড়ানোই এই ধরনের বৈঠকের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে মনে করা হচ্ছে।