জাতির মুক্তি সংগ্রামে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও ভাষাভিত্তিক জাতিসত্তার ভিত রচিত হয়েছে।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন কেবলমাত্র বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য সীমাবদ্ধ ছিল না, এটি মূলত স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ছিল। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্যে এ আন্দোলন বাঙালির আত্মপরিচয়ের ভিত্তি গড়ে তুলেছে।
তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ভাষার গুরুত্বও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে দেশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিশ্বে নেতৃত্ব দেবে, তার ভাষাও একইসঙ্গে বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তার করবে। তাই ভাষার সংরক্ষণ এবং প্রসার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ফ্রান্সের প্যারিসে ইউনেস্কো সদর দপ্তরে আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেওয়া বক্তব্যে ড. ইউনূস বলেন, মাতৃভাষার গুরুত্ব অনুধাবন না করলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করা সম্ভব নয়। তিনি উল্লেখ করেন, ভাষা হলো মানুষের পরিচয়ের মূল ভিত্তি।
ড. ইউনূস আরও বলেন, মাতৃভাষায় অভিব্যক্তির যথার্থ প্রকাশ ঘটে এবং ভাষার মাধ্যমে জাতিগত, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে। তাই অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের জন্য মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিহার্য।
তিনি আরও বলেন, ভাষার প্রতিবন্ধকতা দূর না করলে উচ্চ শিক্ষার প্রসার সম্ভব নয়। ইউনেস্কোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও প্রসারে বিশ্বব্যাপী উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
ইতিহাসকে স্মরণ রেখে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ায় বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বর্ণপদক, সম্মাননাপত্র ও পুরস্কারের অর্থ প্রদান করা হয়।