বাগেরহাটে ৭ মাস ধরে বেতন পান না ২১১ সিএইচসিপি, সেবা ব্যাহত

এফএনএস (এইচ এম মইনুল ইসলাম; বাগেরহাট) : | প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৬:৫৪ পিএম
বাগেরহাটে ৭ মাস ধরে বেতন পান না ২১১ সিএইচসিপি, সেবা ব্যাহত

বাগেরহাটে ৭ মাস ধরে বেতন পান না ২১১ কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা(সিএইচসিপি)।বেতন না পাওয়ায় চরম আর্থিক কষ্টে ভুগছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া এসব কর্মীরা।শুধু বেতন নয়, কোথাও কোথাও নিয়মিত ঔষধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। আবার কোন কোন কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত প্রদান করা ঔষধের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানকারী সরকারি এই প্রতিষ্ঠান থেকে কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষেরা।

বাগেরহাট সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ২১৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। যার মধ্যে ৩ ক্লিনিকে সিএইচসিপি‘র পদ শূন্য রয়েছে। ২১১ জন সিএইচসিপি গেল বছরের জুলাই মাস থেকে বেতন পান না। দীর্ঘদিন ধরে বেতন বন্ধ থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। কেউ কেউ ক্লিনিকে সেবা দেওয়া বন্ধ করেছেন, কেউ তুলনা মূলক কম সেবা দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ নিয়মিত আসছেন না ক্লিনিকে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা চালু রাখতে অতিদ্রুত বেতন চালু করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও সিএইচসিপিরা।

বাগেরহাট সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এলাকার লোকজন প্রায়ই ছোট ছোট অসুস্থতায় রাজাপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে আসি। এখানের ম্যাডাম (সিএইচসিপি) নাকি অনেকদিন বেতন পায় না। এরকম হলে তো আমাদের সেবা দেবে না।

রহিমাবাদ কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা বাসন্তি রানী দাস নামের এক রোগী বলেন, জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়াসহ ছোট খাট যেকোন সমস্যায় আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকে যাই। তবে চুলকানির ঔষধ এখন আর আগের মত পাই না। সিএইচসিপি জানান, ঔষধ কমায়ে দিয়েছে।

বাগেরহাট সদর উপজেলার রহিমাবাদ কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, প্রায় ৮মাস ধরে বেতন পাই না। খুবই কষ্টে সংসার চলছে। তারপরও রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

একই উপজেলার সাবেকডাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি সৈয়াদা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পাওয়া, খুবই কষ্টের। এটা কাউকে বলা যায় না। আর আগে ৩২ প্রকারের ঔষধ দিত, এখন দেয় মাত্র ২০ প্রকার। রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে অতিদ্রুত বেতন চালু করার দাবি জানান এই সিএইচসিপি।

রাজাপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি সুবর্না বলেন, জুলাই মাস থেকে আমাদের বেতন হচ্ছে না। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন ৭০-৮০ টাকা ব্যয় করে ক্লিনিকে আসি রোগীদের সেবা দিতে। বেতন না পাওয়ার কারণে খুবই হতাশ হয়ে যাচ্ছি।মানসিকতাও ভাল নেই। আমাদের মানসিকতা যদি ভাল থাকে তাহলে রোগীদের আরও বেশি সেবা দিতে পারব। এছাড়া নিয়মিত ঔষধ প্রদানের দাবি জানান তিনি।

কমিউনিটি ক্লিনিকে সিএইচসিপিদের নির্দিষ্ট নিয়ম করে রোগীদের সেবা দেওয়া উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) অনুপম রানী দাস বলেন, আমরা ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন ক্লিনিকে সিএইচসিপিদের পাশাপাশি আমরা রোগীদের সেবা দেই।কিন্তু আামরা নিয়মিত বেতন পাই, সেখানে সহকর্মীরা যদি বেতন না পায়, তাহলে আমাদেরও খারাপ লাগে। এজন্য ক্লিনিকের সেবা নিশ্চিত করতে সিএইচসিপিদের বেতন চালু করার দাবি জানান এই কর্মকর্তা।   

এদিকে সরেজমিন ঘুরে বিভিন্ন সময় বাগেরহাট সদর উপজেলা, কচুয়া ও শরণখোলার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে নির্ধারিত সময়ে বাদোখালিসহ কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ পাওয়া যায়।

বাগেরহাটের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক আগে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে চলত। গেল বছরের মাঝামাঝি সময়ে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে একটি ট্রাস্টের আওতায় নেওয়া হয়। এ জন্য সিএইচসিপিদের নিয়োগপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ট্রাস্টের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশাকরি বর্তমান সরকার দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করবেন। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ আবারও আগের মত সেবা পাবেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে