আর কয়েকদিন পরেই শুরু হচ্ছে রমজান মাস। প্রতিবছর রোজার আগে ভোক্তাদের মনে বাজারদর নিয়ে এক ধরনের আশঙ্কা তৈরি হয়। রোজার মাসে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকে। অনেক সময় তা ভোক্তার ক্রয়সীমার বাইরে চলে যায়। এ বছর কি তার ব্যতিক্রম হবে? জানা গেছে, রোজা ঘিরে রেকর্ড নিত্যপণ্য আমদানি হয়েছে। এ সময়ের বাড়তি চাহিদা মেটাতে এরই মধ্যে ছোলা, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, চিনি, ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন পণ্যের বিপুল মজুদ নিশ্চিত করেছেন ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা। ফলে রোজায় অতিমুনাফালোভী চক্র যেভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট কাটে, এবার এ আশঙ্কা নেই; বরং দাম আরো কমতে পারে। রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং পণ্যের দাম কমানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আমদানি বাড়ানো ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোজ্যতেল, ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে আমদানিতে উৎসাহ বাড়ায় এবার ব্যাপক হারে ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছেন আমদানিকারকরা। জানা যায়, রমজানের পণ্যে বোঝাই এখন দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ। এ সময় বাড়তি চাহিদা মেটাতে আগেভাগেই বিপুল পরিমাণে পণ্য আমদানি হয়েছে। বিশেষ করে চিনি, সয়াবিন তেল, ডাল, মটর, ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও খেজুরের বাড়তি চাহিদা মেটাতে রোজা শুরুর তিন-চার মাস আগে থেকেই এসব পণ্য আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা। রোজার আগে পণ্য আমদানি বেড়েছে প্রায় ৩১ শতাংশ। পণ্যের আমদানি বেশি হওয়ায় দামও কমেছে বলে জানা গেছে। সমপ্রতি একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেছেন, রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাজারের সঙ্গে যাঁরা অংশীজন আছেন, তাঁদের সঙ্গে সমন্বয় করে বাজার ব্যবস্থাপনার চেষ্টা করা হচ্ছে। আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, সরকার চাল-ডাল আমদানি করছে এবং মজুদ করে রাখছে। পাশাপাশি বাজার মনিটরও করা হবে। কোনো ব্যবসায়ী যাতে খাদ্যপণ্যের দাম না বাড়াতে পারে, সে জন্য সরকার যথেষ্ট সজাগ। বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনা মোটেই সংগঠিত নয়। এর সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীকে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে দেখা যায়। কোনো কোনো সময় বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। বাংলাদেশের বাজারে একটি অদৃশ্য সিন্ডিকেটের কথা শোনা যায়। এই সিন্ডিকেট বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করে এমন কথাও চালু আছে। বাজারের নিয়ন্ত্রণ সরকার নিতে না পারলে কোনোভাবেই পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা সম্ভব হবে না। কাজেই সরকারকে মূল ভূমিকা নিতে হবে। রোজা আসছে, এরপর ঈদ। রোজা ও ঈদে পণ্যমূল্য যাতে ভোক্তাদের সাধ্যের মধ্যে থাকে তার জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। মনিটরিং বাড়াতে হবে। আমরা আশা করব, সাধারণের সুবিধার্থে সরকার যথাবিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।