বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে নতুন রেকর্ড গড়েছে। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকায়, যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। এ সময় ডেপুটি গভর্নরসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যাংকেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৪২.৮৩ শতাংশ, আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে এই হার ১৫.৬০ শতাংশ।
গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর খেলাপি ঋণের বৃদ্ধির পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। তার মতে, দীর্ঘদিন ধরে ঋণ শ্রেণিকরণ পদ্ধতির দুর্বলতা, ঋণ পুনঃতফসিলের নামে সময়ক্ষেপণ এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে অনেক ঋণগ্রহীতা দায়মুক্তি পেয়েছেন। ফলে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের বোঝা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
গভর্নর বলেন, "আমরা আগেই বলেছিলাম যে খেলাপি ঋণ বাড়বে। এখন সেটাই বাস্তবে ঘটেছে। তবে আমরা এ সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছি। খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারের জন্য কঠোর আইন বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।"
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিসেম্বর ২০২৪ শেষে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। গত ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংক থেকে অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ এবং পরে তা ফেরত না দেওয়ার সংস্কৃতি তৈরি হওয়ায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন বলে তারা মত প্রকাশ করেছেন।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক যদি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তাহলে খেলাপি ঋণের বোঝা ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে, যা সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য হুমকির কারণ হতে পারে।