সরকারি কেনাকাটায় অনিয়ম

স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে

এফএনএস | প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৬:৫৩ পিএম
স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে

সরকারি কেনাকাটায় অনিয়ম-দুর্নীতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে ২০১১ সালে সরকারি ই-প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) ব্যবস্থা চালু করা হয়, কিন্তু তাতেও সরকারি কেনাকাটার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়নি। ই-জিপি ব্যবস্থায় বাজার দখল, ঠিকাদারদের যোগসাজশ এবং রাজনৈতিক প্রভাব বিদ্যমান থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে। পর্যবেক্ষণে তারা বলেছে, সরকারি ক্রয় খাত এখনো জিম্মি অবস্থায় রয়েছে। এই অবস্থায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে গবেষণা প্রতিবেদনে পাঁচ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। সরকারি কেনাকাটায় দুর্নীতির চেষ্টা কমবেশি সব দেশেই আছে। বেশির ভাগ দেশ, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলো নানা প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির সেসব প্রচেষ্টা রোধ করে। অন্য দেশগুলোতে দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারণে দুর্নীতি লাগামহীন হয়ে পড়ে। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ২০১২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে পাঁচ লাখ ৯৬ হাজার ৯৯১ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে শীর্ষ ১০ মন্ত্রণালয় প্রায় ৯২ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে। এই ১০টি মন্ত্রণালয়ের গড়ে ৬১ শতাংশ কার্যাদেশই চলে গেছে মাত্র ৫ শতাংশ ঠিকাদারের হাতে। তিনি জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের যৌথ মালিকানা ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী প্রকল্পগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছে। ফলে প্রতিযোগিতার সুযোগ কমে যাচ্ছে, যা সরকারি কেনাকাটায় স্বচ্ছতা হ্রাস করছে। সরকারি ই-প্রকিউরমেন্ট ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে টিআইবি যেসব সুপারিশ করেছে তার মধ্যে রয়েছে, যুগ্ম উদ্যোগ (জেভি) বা যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম কঠোরভাবে পর্যালোচনা করা এবং এ জন্য স্বাধীন পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা। যে ঠিকাদার এককভাবে বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সক্ষম, তাকে জেভি গঠনের অনুমতি না দেওয়া। ঠিকাদারদের জন্য বাজার শেয়ারের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করার পাশাপাশি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা। সরকারি ক্রয়ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক মানের নিয়ম-নীতি ও প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা। এ ছাড়া পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস সংশোধন করে সব কম্পানি ও জেভির প্রকৃত মালিকানা তথ্য উন্মুক্ত করতে হবে। ই-জিপি প্ল্যাটফরমের বাইরে থাকা উচ্চমূল্যের প্রকল্পগুলোকেও ই-টেন্ডারিং প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসতে হবে। আমরা আশা করি, সরকারি কেনাকাটার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সরকার সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দেখাবে। এ ক্ষেত্রে টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে।