বেক্সিমকোর বন্ধ কারখানা পুনর্বাসনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি

বেক্সিমকো কর্মীদের ৫২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বেতন পরিশোধ করবে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
| আপডেট: ২১ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:২৭ পিএম | প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৭:৪৪ পিএম
বেক্সিমকো কর্মীদের ৫২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বেতন পরিশোধ করবে সরকার
শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন-ফাইল ছবি

দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প গ্রুপ বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে লে-অফ ঘোষণা করা ১৪টি কারখানার পুনর্বাসনের জন্য সরকার উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছে। পাশাপাশি, শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

বেক্সিমকোর ১৪টি কারখানার ৩১,৬৬৯ জন শ্রমিক এবং ১,৫৬৫ জন কর্মকর্তার বকেয়া পরিশোধের জন্য সরকার ৫২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।

তিনি বলেন, “চলতি ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কর্মীদের পাওনা পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে শ্রম মন্ত্রণালয়ের তহবিল থেকে ২০০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দেওয়া হচ্ছে এবং অর্থ বিভাগের পরিচালন ব্যয় খাত থেকে ৩২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।”

আগামী ৯ মার্চ থেকে শ্রমিকদের বেতন বিতরণ শুরু হবে এবং তা রমজানের মাঝামাঝি সময়ে শেষ করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বেক্সিমকোর পুনর্বাসন পরিকল্পনা নিয়ে সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। শ্রম উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম পুনরায় সচল করার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা থাকলেও আমরা আশা করছি, খুব শিগগিরই বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়া যাবে। যারা পুনর্বাসিত হবেন, তারা উপকৃত হবেন।”

বেক্সিমকোর ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। এ কমিটিতে আরও রয়েছেন:

• সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের প্রতিনিধি
• বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি
• অ্যাটর্নি জেনারেলের মনোনীত প্রতিনিধি
• বেক্সিমকোর রিসিভার
• বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান (সদস্য সচিব)

এই কমিটি বেক্সিমকোর শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যৎ নির্ধারণে কাজ করবে এবং উপযুক্ত বিনিয়োগকারীদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব পালন করবে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের কারখানাগুলোতে অস্থিরতা চলছে। গ্রুপটির ভাইস-চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান কারাগারে যাওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোর দৈনন্দিন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ফলে, শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন করেছেন।

এ পরিস্থিতিতে গত ২৪ নভেম্বর সরকার একটি উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠন করে, যা বেক্সিমকোর শ্রম ও ব্যবসায়িক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে লে-অফ ঘোষণা দেয়।

সরকারি তদন্ত কমিটির তথ্য অনুযায়ী, বেক্সিমকোর বর্তমানে ৪০ হাজার কোটি টাকার ঋণ রয়েছে, যা ক্রমশ খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে। কোম্পানির ব্যাংক হিসাবগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা নতুন ঋণ নিতে পারছে না, ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, “আমরা চাই না কোনো শ্রমিক তার চাকরি হারান। তাদের পরিবার আছে, জীবিকা আছে। তাই শ্রমিকদেরও এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়, যাতে আমাদের কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়।”

তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, সরকার শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করে যাবে এবং যথাযথ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে