দুই মাস মাছ ধরা বন্ধ

জাটকা সংরক্ষণ অভিযান- ২০২৫ শুরু

এফএনএস (মিজানুর রহমান; চাঁদপুর) :
| আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৪:২১ পিএম | প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৪:২১ পিএম
জাটকা সংরক্ষণ অভিযান- ২০২৫ শুরু

ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি ও জাটকার নিরাপদ বিচরণ নিশ্চিতে চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনাসহ ৬টি নদী অঞ্চল শরিয়তপুর, লক্ষ্ণীপুর, বরিশাল, ভোলায় দুই মাস মাছ ধরা যাবে না। জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে আজ ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ইলিশের অভয়াশ্রমগুলোতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এই দুই মাস সব ধরনের ইলিশ সংরক্ষণ, আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ ও মজুদকরণ নিষিদ্ধ করা হয়।

ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষিত চাঁদপুরের হাইমচর চরভৈরবী থেকে  ষাটনল পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার অভয়শ্রম এলাকার সকল মাছ ঘাট  নিষেধাজ্ঞা চলাকালে বন্ধ থাকবে। অভয়াশ্রম বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা টাস্কফোর্স।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে "জাটকা নিধন প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সভা" অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ইলিশ  জাটকা নিধন প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণ ও কর্মপন্থা ঠিক করা হয়। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ, নৌ পুলিশ সুপার, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, কোস্ট গার্ডের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান  জানান, দুই মাস নিয়মিত জেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী অভিযান পরিচালনা করবে। এদিকে, অভয়াশ্রম বাস্তবায়নে নিবন্ধিত ৪০ হাজার ৫ জন জেলেকে জনপ্রতি ৪০ কেজি করে চার কিস্তিতে ১৬০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে মাছ শিকার করতে গিয়ে ধরা পড়লে কমপক্ষে এক বছর থেকে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানাসহ উভয় দন্ডে দণ্ডিত হতে পারে।

চাঁদপুর সদর উপজেলার বহরিয়া ও হরিনা ফেরিঘাট এলাকার মেঘনা পাড়ের জেলেরা জানান, সরকার দুই মাস মাছ ধরতে নিষেধাজ্ঞা দিছে। সেই আদেশ তারা মেনে চলছেন। ইতোমধ্যে নৌকা-জাল ওপরে উঠিয়ে ফেলছেন। সরকারের কাছে সবসময় দাবি থাকে, যাতে চালের সাথে আর্থিক সহায়তা করে। কারণ চালের সাথে রান্না করতে তেল নুন, তরকারিসহ আনুষাঙ্গিক জিনিসের দরকার হয়।

জেলেরা আরও বলেন, অধিকাংশ জেলে ধার দেনা ও কিস্তিতে জর্জরিত। এই সময়ে কিস্তি বন্ধ থাকলে আমরা উপকৃত হবো। প্রশাসন যদি কিস্তি বন্ধ রাখে আমাদের চাপ কমে আসবে। জেলেরা আরো জানান, প্রকৃত ইলিশ জেলে তারা নিষেধাজ্ঞার সময় নদীতে যায় না। কিছু জেলে আছে তারা জাটকা ধরে আবার সরকারের চালও খায়। তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও তাদের। আর সরকারের দেওয়া ৪০ কেজি চাল পুরোপুরি দেয়া হয় সেই দিকে খেয়াল রাখার অনুরোধ করেন তারা। চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান জানান, জাটকা রক্ষায় নদীতে সার্বক্ষণিক অভিযান চলবে। এ বিষয়ে জেলেদের সচেতন করার জন্য নদী ও মৎস্য আড়ত এলাকায় মাইকিং ও পোস্টারিংসহ সব ধরনের প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে জেলা প্রশাসন ও জেলা মৎস্য বিভাগ। এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করার জন্য নদীতে মৎস্য বিভাগ, উপজেলা-জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করা হবে। আইন অমান্য করলে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে।

এছাড়া তাদের জন্য নির্ধারিত ভিজিএফএর চাল বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরো বলেন, মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের মতই জাটকা রক্ষা অভিযান কঠোর হবে। অভয়াশ্রমে অসাধু জেলেরা যাতে কোনভাবেই নদীতে নামতে না পারে সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে মৎস্য বিভাগ। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ও নদীতে জাটকার নিরাপদ বিচরণ নিশ্চিতে ২০০৬ সাল থেকে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস নদীতে সকল প্রকার মাছ শিকার নিষিদ্ধ করে সরকার।

লক্ষ্ণীপুর জেলা মৎস্য অধিদপ্তর জানায়, এ বিষয়ে জেলেদের সচেতন করার জন্য নদী এবং উপকূলবর্তী এলাকায় মাইকিং ও পোস্টারিংসহ সব ধরনের প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে জেলা প্রশাসন ও জেলা মৎস্য বিভাগ। এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করার জন্য নদীতে মৎস্য বিভাগ, উপজেলা-জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করা হবে। আইন অমান্য করলে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে।

এদিকে স্থানীয় পর্যবেক্ষক মহলের অভিমত, ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে চাঁদপুরের নদ নদীতে জাটকা ধরা শুরু হয়ে গেছে। এখন যখন অভিযান শুরু হয়েছে,জাটকা সংরক্ষণ কতুটুক হয় সেটাই দেখার বিষয়।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে