শিক্ষা একটি জাতির অগ্রগতির মূল হাতিয়ার। একটি সুসংগঠিত শিক্ষাব্যবস্থা একটি জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথকে সহজ করে দেয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার চরম অব্যবস্থাপনা ও নীতিগত দুর্বলতা শিক্ষার্থীদের জন্য মারাত্মক সংকট তৈরি করেছে। বিশেষ করে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের নামে অব্যবস্থাপনা, ভুলত্রুটি সংশোধনে দীর্ঘসূত্রিতা এবং পাঠ্যবই সরবরাহে গাফিলতির কারণে শিক্ষাব্যবস্থা আজ বড় চ্যালেঞ্জের মুখে। জুলাই বিপ্লবের পর মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে এবং করোনা মহামারি ও জুলাই বিপ্লবের কারণে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন পড়াশোনার বাইরে ছিল, অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত তাদের পড়ার ধারায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে। কিন্তু আদতে হচ্ছে তার উল্টো। নতুন শিক্ষাবর্ষের একমাস পেরিয়ে গেলেও এখনো শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন পাঠ্যবই তুলে দিতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। শিক্ষাবছরের প্রায় দুই মাস পার হতে চললেও সরকার বিনা মূল্যের সব পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না। অন্যদিকে ‘মূল্য’ দিয়ে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই কেনা যাচ্ছে বাংলাবাজার, নীলক্ষেতসহ বিভিন্ন বাজারে। কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে পাঠ্যবইয়ের কালোবাজারি রহিত করা যায়নি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তথ্য বলছে, প্রায় সাত কোটি বই ছাপা হওয়া বাকি, যার অধিকাংশই মাধ্যমিক পর্যায়ের। শিক্ষাক্রম পরিবর্তন, পাঠ্যবই পরিমার্জনসহ কিছু সমস্যার কারণে এবার শিক্ষা বিভাগ থেকে বলা হয়েছিল, বই পেতে কিছুটা দেরি হবে। কিন্তু বাস্তবে সেই দেরি দুই মাস পেরিয়ে তৃতীয় মাসে গিয়ে পড়তে যাচ্ছে। একটি সুশৃঙ্খল ও কার্যকর শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে সরকারের উচিত বই বিতরণের ক্ষেত্রে সব অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সমান অগ্রাধিকার দেওয়া। দুর্গম এলাকার বিদ্যালয়গুলো যাতে সময়মতো বই পায়, সে জন্য আলাদা পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, এনসিটিবি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি তাদের ভবিষ্যতও অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। এ বিষয়ে প্রশাসনের গাফিলতি রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা জরুরি। পরিকল্পনার অভাব, ছাপার ধীরগতি এবং বিতরণব্যবস্থার অদক্ষতার কারণে শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে। স্কুলগুলোতে স্বাভাবিক ও পুরোদমে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে সরকারের উচিত হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। পাশাপাশি পাঠ্যবই ছাপানো ও পৌঁছাতে দেরি হওয়ার কারণ তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট কারো দায়িত্বে অবহেলা, সাবেক সরকারের আনুগত্যের কারণে বর্তমান সরকারের বদনাম করানোর জন্য শিক্ষার্থীদের বলির পাঠা বানানোর প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।