বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের (ডিজি) পদ থেকে নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ জামিল আহমেদের আকস্মিক পদত্যাগ নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। একাডেমির কাজে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও উপদেষ্টার হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে তিনি গত শুক্রবার সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে ইস্তফার ঘোষণা দেন। তার এই পদত্যাগের প্রতিক্রিয়ায় মুখ খুলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে ফারুকী উল্লেখ করেন, সৈয়দ জামিল আহমেদের বক্তব্যের অনেক কিছুই পুরোপুরি সত্য নয়, কিছু বিষয় সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং কিছু কথা হতাশা থেকে বলা। তিনি বলেন, "আমি জামিল ভাইয়ের কাজের একজন গুণমুগ্ধ ভক্ত। সম্ভবত উনার কাজ নিয়ে বাংলাদেশে কোনো পত্রিকায় সবচেয়ে বিস্তারিত লেখাটা আমি লিখেছিলাম। এখনও আমি তাঁকে বাংলাদেশের থিয়েটারের সবচেয়ে মেধাবী নির্দেশক মনে করি।"
ফারুকী আরও বলেন, "ভালো শিল্পী হওয়া আর আমলাতন্ত্রকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পরিচালনা করা—এ দুটি ভিন্ন দক্ষতা। দ্বিতীয়টি করতে গেলে ধৈর্য ও ব্যবস্থাপনার দক্ষতা প্রয়োজন হয়। সহকর্মীদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা দিয়ে অনেক কাজ আদায় করা সম্ভব। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কাঠামোর প্রতি সামঞ্জস্য বজায় রাখার প্রয়োজন রয়েছে, যা থিয়েটার পরিচালনার ধৈর্যের সঙ্গে এক নয়।"
তিনি আরও বলেন, "আমি জামিল ভাইয়ের নাটকীয় পদত্যাগ নিয়ে কিছু বলতে চাইনি, কারণ এতে আমাকে এমন কিছু তথ্য প্রকাশ করতে হতে পারে যা তাঁর জন্য অস্বস্তিকর হবে। আমি তাঁকে শ্রদ্ধা করি, তাই বিষয়টি নিয়ে নীরব থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি আমাকে কিছু সত্য তুলে ধরতে বাধ্য করছে।"
ফারুকী স্পষ্ট জানান, "উনার (জামিল আহমেদ) বলা অনেক কথা পুরো সত্য নয়, কিছু কথা পুরোপুরি মিথ্যা এবং কিছু হতাশার প্রতিফলন। আমি চাইনি এ নিয়ে বিস্তারিত বলতে, তবে এখন মনে হচ্ছে, সত্যটা প্রকাশ করাই ভালো।"
গত শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় সৈয়দ জামিল আহমেদ মঞ্চে দাঁড়িয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন। মুনীর চৌধুরী ১ম জাতীয় নাট্যোৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকা অবস্থায় তিনি এই ঘোষণা দেন। অনুষ্ঠানের মঞ্চে থাকা শিল্পকলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেনের হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দেন তিনি।
তার পদত্যাগের পর মঞ্চের সামনে উপস্থিত অনেকে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। তখন তিনি নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে থাকেন এবং একপর্যায়ে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর এই বক্তব্য স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে, শিল্পকলা একাডেমির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে বিতর্ক এখনও শেষ হয়নি। এখন দেখার বিষয়, সরকার এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেয় এবং এই ঘটনা ভবিষ্যতে কী ধরনের প্রভাব ফেলে।