উন্নয়ন প্রকল্পের নামে অপচয় যেন না হয়

এফএনএস | প্রকাশ: ৩ মার্চ, ২০২৫, ০৭:৩৬ পিএম
উন্নয়ন প্রকল্পের নামে অপচয় যেন না হয়

উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা চলে গেছে সুবিধাভোগী একটি গোষ্ঠীর হাতে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের স্বার্থে প্রকল্প প্রণয়ন করে টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেন, এমন অভিযোগ অনেক পুরোনো। প্রকল্পের নামে এভাবে টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে অনেক আগে থেকেই। জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের পকেট ভারী করতে ও দলের লোকদের কর্মসংস্থান করতে গিয়ে নানা প্রকল্প দেখিয়ে উন্নয়ন বরাদ্দের টাকা লুটপাটে অংশ নিয়েছেন বলে অভিযোগ অতীতে বারবারই শোনা গেছে। বাস্তবে কোনো উন্নয়নকাজ হয়নি। গত ১৫ বছর ধরে এভাবেই দলীয় নেতাকর্মী ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের পকেট ভারী হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে উন্নয়নের ছিটেফোঁটাও কোথাও লাগেনি। পৃথিবীজুড়ে উন্নয়নশীল ও ছদ্মগণতান্ত্রিক দেশগুলোর সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়নকে জনতুষ্টির একটি হাতিয়ার হিসেবে দেখাতে চেষ্টা করে। এ ধরনের দেশগুলোয় যখন গণতন্ত্রহীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়ে পড়ে তখন জনগণের সামনে অবকাঠামোগত উন্নয়নের চিত্র মেলে ধরা হয়। এটাকে সরকারের সাফল্য হিসেবে দেখানো হয় এবং তথাকথিত এ উন্নয়নের বিনিময়ে জনগণের অধিকার হরণকে জায়েজ করতে চায়। অবকাঠামোগত উন্নয়নের সবচেয়ে বড় সুবিধা, এটা দৃশ্যমান এবং সহজে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণে দারুণ কার্যকরী। অবকাঠামোগত উন্নয়নকে উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করে বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের দেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেখাতে চেয়েছিল বিগত সরকার। অথচ বাংলাদেশে অবকাঠামো ব্যয় বিশ্বের মাঝে অন্যতম ব্যয়বহুল এবং অনেক ক্ষেত্রেই কাজের মান খুবই খারাপ। আমাদের সড়ক-মহাসড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট, ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন, মেট্রোরেল, বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর কিংবা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ ব্যয় মান অনুযায়ী অস্বাভাবিক রকমের বেশি এবং কিছু ক্ষেত্রে সেগুলো ইউরোপ-আমেরিকার চেয়েও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেশি। আবার গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে কোনো সরকারি প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শুরু হওয়ার নজিরও খুব কম। কোনো প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষও হয়নি। দফায় দফায় সময় বাড়ানো হয়েছে, আর তাতে ব্যয়ও বেড়েছে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হয় রাস্তার উন্নয়ন প্রকল্প কাজের জন্য। সারা বছর রাস্তা মেরামত ও নতুন রাস্তা নির্মাণের কাজ চলে। তবে কাজে ধীরগতি সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বহু অংশে বৃদ্ধি করে দেয়। দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশের অধিকাংশ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে অধিক সময় ও অর্থ ব্যয় হয়। বিভিন্ন প্রকল্পে ৫ অথবা ১০ কোটি টাকার দুর্নীতি যেন কোনো কিছুই নয়। সরকারকে এ বিষয়ে প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহির আওতায় এনে সমস্যার ইতিবাচক সমাধান টানতে হবে। ভবিষ্যতে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে লুটপাট যেন না হয় সে বিষয়ে সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে।